শিরোনাম
ঢাকা, ১২ জুন, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন ও ক্ষতিকর বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আগে যে কড়াকড়ি ছিল, তা এখন শিথিল করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। বুধবার পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবেশবিরোধী অবস্থানের ধারাবাহিকতায় এটি সর্বশেষ উদ্যোগ।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এই তথ্য জানায়।
ইপিএ প্রধান লি জেলডিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতির উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।’
প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে কয়লাভিত্তিক ও গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পারদসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের নির্গমন নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান বিধিনিষেধ বাতিলের পরিকল্পনা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এই নিয়মগুলো মূলত যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য চালু করা হয়েছিল। কারণ, এসব দূষণ স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে ও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, আগের সরকারের এসব নিয়ম বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বাড়াচ্ছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির বিস্তারে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়েছে, সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই নীতিমালায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ ঘোষণার কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ২শ’র বেশি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, এটি ইপিএ-এর মূল লক্ষ্য, জনস্বাস্থ্য রক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।
তাদের মতে, এই পরিবর্তন গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ বাড়াতে পারে।
-যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাত, এক বড় দূষণকারী-
ইপিএ প্রধান জেলডিন দাবি করেন, নতুন নিয়ম চালু হলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দূষণ আগের মাত্রার বাইরে যাবে না।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিরপেক্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর পলিসি ইন্টিগ্রিটি’র সাম্প্রতিক এক পরিবেশ গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাত ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ দূষণকারীর তালিকায় আছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাতকে একটি দেশ ধরা হয়, তাহলে ২০২২ সালে এটি বিশ্বের ছয় নম্বর সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হতো।
এছাড়াও ১৯৯০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এটি বিশ্বের মোট দূষণের পাঁচ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়লা ও গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর নির্গত গ্রীনহাউজ গ্যাস জলবায়ু ক্ষতির কারণ হয়। এর কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে, পাশাপাশি অর্থনীতিতে শত শত বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।
নতুন নিয়মে বাতিল হওয়ার পথে রয়েছে এমন একটি বিধি, যেখানে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন আটকে রাখতে বলা হয়েছিল। এই প্রযুক্তি এখনো দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয়নি।
-পরিবেশ নীতিতে বড় বাঁক-
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সন্দেহকারী ট্রাম্প চায় কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় জ্বালানি দিয়ে কাজ চালাতে।
তিনি জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই পরিবেশ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নিয়ম বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা জানায়, তারা বাইডেন সরকারের সময় চালু হওয়া অনেক পরিবেশবান্ধব নিয়ম বাতিল করবে। এর মধ্যে আছে গাড়ির ধোঁয়া কমানোর নিয়ম আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড কম বের করার নিয়ম।
বুধবার ঘোষিত নতুন নিয়ম এখন জনমত যাচাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। আইনে পরিণত হওয়ার আগে এগুলো আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে পারে।
