সমুদ্র সংরক্ষণে অগ্রগতির বার্তা দিয়ে শেষ হচ্ছে জাতিসংঘ সম্মেলন

বাসস
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১০:১২

ঢাকা, ১৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের মহাসাগরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘ সম্মেলন শুক্রবার শেষ হচ্ছে—যেখানে গভীর সমুদ্র খনন নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জলসীমায় সংরক্ষণ উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে।

তবে ছোট দ্বীপ-রাষ্ট্রগুলোর জন্য বড় আর্থিক প্রতিশ্রুতি না দেওয়া এবং এজেন্ডা থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসঙ্গ বাদ পড়ায় অনেক প্রতিনিধি হতাশা প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সের নিস থেকে এএফপি জানায়, পাঁচ দিনের এ সম্মেলনে স্বাগতিক ফ্রান্সের নিস শহরে বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, হাজার হাজার বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও সামুদ্রিক সংরক্ষণকর্মীরা অংশ নেন। এটি জাতিসংঘের আওতায় তৃতীয়বারের মতো মহাসাগর বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন এবং এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন।

কোলোম্বিয়া, গ্রিস ও সামোয়ার মতো বেশ কিছু দেশ নতুন সামুদ্রিক উদ্যান ও সংরক্ষিত এলাকা তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করে। কেউ কেউ বটম ট্রলিং পদ্ধতির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে—যেটি ডেভিড অ্যাটেনবরোর একটি ভাইরাল প্রামাণ্যচিত্রে ভয়াবহ রূপে উপস্থাপিত হয়েছিল।

তবে আন্তর্জাতিক জলসীমার ৬০ শতাংশ অংশে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক চুক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টার জন্য পরিবেশবাদীরা সম্মেলনকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

ফ্রান্স সম্মেলনে ‘উচ্চ সাগর চুক্তি’ কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০টি অনুসমর্থন পাওয়ার আশায় ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ৫১টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করেছে, যা ‘সমুদ্র রক্ষায় একটি বড় অগ্রগতি’ বলে মন্তব্য করেন হাই সিজ অ্যালায়েন্সের রেবেকা হাবার্ড।

তিনি বলেন, 'এই অসাধারণ অগ্রগতিকে আমরা উদযাপন করছি, তবে বাকি দেশগুলোকে অবিলম্বে অনুমোদনের আহ্বান জানাচ্ছি।'

সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন বিশ্ব প্লাস্টিক দূষণ এবং সাগর তলদেশে খনিজ অনুসন্ধান বিষয়ে বৈশ্বিক নিয়মনীতি নির্ধারণে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিসে ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রীরা এক প্রতীকী বিবৃতিতে আগামী আগস্টে আবার শুরু হতে যাওয়া আলোচনায় একটি শক্তিশালী প্লাস্টিক চুক্তির পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনে বিজ্ঞান ও নীতিনির্ভর ব্যবস্থাপনার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়—বিশেষ করে অজানা সাগরতলের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন একতরফাভাবে গভীর সমুদ্র খনন দ্রুত শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন নেতারা এমন অন্ধ দৌড় প্রতিহত করতে বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্তর্জাতিক সিবেড অথরিটি আগামী জুলাইয়ে বৈঠক করবে।

গ্রিনপিসের ফ্রাঁসোয়া শার্তিয়ে এএফপিকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পর নেতৃত্বদের বক্তব্যে কঠোরতা এসেছে।' তবে সম্মেলনে খুব কম দেশই সাগরতলে খনিজ অনুসন্ধানে বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা বা বিরতির আহ্বানে নাম লেখায়। শার্তিয়ে একে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেন।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমাছ ধরা ও সামুদ্রিক দূষণের সম্মুখীন ছোট দ্বীপ-রাষ্ট্রগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও ধনী দেশগুলোর তরফ থেকে নতুন আর্থিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।

সম্মেলন শেষে শুক্রবার একটি যৌথ রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া হবে—যেটিকে সমালোচকেরা দুর্বল বলে মনে করছেন, কারণ এতে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসঙ্গ নেই—অথচ এটিই সমুদ্র উষ্ণতার মূল কারণ।

সামুদ্রিক সংরক্ষণ সংস্থা ওশানকেয়ার বলেছে, এই সম্মেলন 'আরেকটি সদিচ্ছাসম্পন্ন কিন্তু ফাঁপা ঘোষণায়' শেষ হওয়া উচিত নয়।

তারা বলেছে, 'বিজ্ঞান স্পষ্ট। পথও স্পষ্ট। অনুপস্থিত শুধু প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তবায়ন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ইসরাইল-ইরান সংঘাত: আমরা যা জানি
বাগেরহাটে নদীতে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু 
লালমনিরহাটের সীমান্তে বিএসএফ’র ফের পুশইন
চট্টগ্রামে আরো একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত
বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা অনুমোদন
জাফলংয়ের পাথর উত্তোলনের জন্য আর ইজারা দেওয়া হবে না : পরিবেশ উপদেষ্টা
ইরান আরো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে ‘তেহরান পুড়ে যাবে’: ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী
পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৪ ভারতীয়সহ ১৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ
ঈদের ছুটি শেষে উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ 
ইসরাইল-ইরান সংঘর্ষ: আকাশসীমা খুলে দিল জর্ডান, সিরিয়া ও লেবানন
১০