ইরান ইসরাইলে একশ’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে 

বাসস
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১০:০৩

ঢাকা, ১৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরান প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এরপর শুক্রবার ইসরাইল জুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠেছে। কয়েক ঘণ্টা পরে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে আঘাত হেনেছে। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি ও আহত হয়েছে, যদিও ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ এখনো স্পষ্ট নয়। 

তেল আবিব থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দফায় ইরান থেকে দুটি আক্রমণে প্রায় ১শ’টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইলের একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যা ‘আয়রন ডোম’ নামে পরিচিত, যা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করেছে। আইডিএফ সীমিত সংখ্যক কাঠামোতে আঘাতের কথা জানিয়েছে, কিছু বাধা ব্যর্থতার কারণে।

ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা আগুনে পুড়ে গেছে। আইডিএফ জানিয়েছে, ২১ জন আহত হয়েছেন এবং দু’জন গুরুতর অবস্থায় আছেন।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পরবর্তী ধাপে আরো কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র এসেছে এবং আবার আইডিএফ জানিয়েছে, কিছু, কিন্তু সব নয়, প্রতিহত করা হয়েছে। ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বাহিনী বর্তমানে দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালাচ্ছে যেখানে প্রজেক্টাইল পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে’।

মার্কিন এক কর্মকর্তা এবং হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা ‘সিবিএস নিউজ’কে নিশ্চিত করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র রোধে ইসরাইলকে সহায়তা করেছে।
সিবিএস নিউজ নিশ্চিত করেছে, ইরাকের বাগদাদের গ্রিন জোনে এবং সিরিয়ার আল-তানফ গ্যারিসনে সৈন্যরা প্রায় এক ঘণ্টা বাঙ্কারে অবস্থান করেছিল। হামলার সময়, মধ্যপ্রাচ্যের দুটি ঘাঁটিতে অবস্থিত মার্কিন সেনাদের বাঙ্কারে পাঠানো হয়েছিল।

আইডিএফ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন শুক্রবার বলেছেন, রাতভর শুরু হওয়া একটি বড় অভিযান অব্যাহত রেখে ইসরাইল ইরানের ওপর ২শ’টিরও বেশি বিমান হামলা চালানোর পর ইরান থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডিফ্রিন বলেছেন, ইসরাইলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।

ইরানের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত শুক্রবার বলেছেন, ইসরাইলি হামলায় ৮৫ জন নিহত এবং ৩৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

ইসরাইল শুক্রবার ভোরে ইরানের ওপর প্রথম বিমান হামলা শুরু করে এবং ঘোষণা করে, তাদের অভিযান ইরানের পরমাণু স্থাপনা, বিজ্ঞানী এবং সিনিয়র সামরিক কমান্ডারদের টার্গেট করে চালানো হচ্ছে।

ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে তেহরান ইসরাইলে ১শ’টিরও বেশি ড্রোন নিক্ষেপ করে এর জবাব দিয়েছে। ডিফ্রিন শুক্রবারের শুরুতে বলেছেন, ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘হুমকি প্রতিহত করার’ জন্য কাজ করেছে। 

পরে শুক্রবার, একজন ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, হুমকি এখনো শেষ হয়নি, তবুও ইসরাইল ইরানের অনেক ইউএভিকে আটকাতে সক্ষম হয়েছে।

ডিফ্রিন স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে বলেছেন, ‘দিনব্যাপী, আমরা আবারো সমন্বিত, সুনির্দিষ্ট এবং সাহসী উপায়ে হুমকি অপসারণের আমাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছি।’

শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং ইসরাইলকে ‘অসহায়’ করে দেবে।

বিবৃতির কিছুক্ষণ পরেই, আইডিএফ নিশ্চিত করেছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ‘ইসফাহান এলাকায় ইরানি সরকারের পরমাণু স্থাপনায় একটি হামলা সম্পন্ন করেছে।’ ইসফাহান মধ্য ইরানে অবস্থিত। 

আইডিএফ জানিয়েছে, এই হামলায় ‘ধাতব ইউরেনিয়াম উৎপাদনের একটি স্থাপনা, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পুনর্নির্মাণের জন্য অবকাঠামো, পরীক্ষাগার এবং অতিরিক্ত অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরাইলের হামলায় আমেরিকা জড়িত ছিল না, তিনি একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন, ‘ইরান যেন মার্কিন স্বার্থ বা কর্মীদের টার্গেট না করে।’
চারটি সূত্র ‘সিবিএস নিউজ’কে জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বৃহস্পতিবার এই অঞ্চলের একাধিক মার্কিন মিত্র সরকারকে ইরানে ইসরাইলি হামলা এবং গোয়েন্দা

অভিযানের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল। সূত্র জানিয়েছে, রুবিও ব্যক্তিগতভাবে তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই বার্তাগুলোতে প্রধান বার্তাটি ছিল, এটি কোনো মার্কিন অভিযান ছিল না এবং এতে মার্কিন সম্পদ জড়িত ছিল না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তির চেয়ে কূটনীতি পছন্দ করে।

শুক্রবার সকালে তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তি করার জন্য ‘একের পর এক সুযোগ’ দিয়েছেন, কিন্তু তেহরানের প্রতি তার সতর্কীকরণ সত্ত্বেও যে বিকল্পটি আগে দেখা যেকোনো কিছুর চেয়ে ‘অনেক খারাপ’ হবে, ‘তারা এটি সম্পন্ন করতে পারেনি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট “ট্রাম্প বলেছিলেন ‘ইতোমধ্যেই প্রচুর মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, কিন্তু এই হত্যাকাণ্ড এড়ানোর জন্য এখনো সময় আছে চুক্তি করার। পরবর্তী পরিকল্পিত আক্রমণগুলো আরো নৃশংস হওয়ার সাথে সাথে সহিংসতা শেষ যাক। ‘ইরানকে অবশ্যই একটি চুক্তি করতে হবে।’

শুক্রবারের পরবর্তী পোস্টে, ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি ‘ইরানকে ‘চুক্তি করার জন্য ৬০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। তাদের এটা করা উচিত ছিল! আজ ৬১তম দিন। আমি তাদের কী করতে হবে তা বলেছিলাম, কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। এখন তাদের কাছে সম্ভবত দ্বিতীয় সুযোগ আছে!’’

ডিফ্রিন বলেছেন, ইসরাইল ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পূর্ববর্তী বৃহৎ আকারের আক্রমণে চালানো প্রায় প্রতিটি ইরানি অস্ত্র আটকে দিয়েছে। ইরানের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ দীর্ঘ প্রত্যাশিত এবং সুপরিকল্পিত ছিল।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শুক্রবার ইরানি টিভিতে বলেছেন, দেশটি আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ নেবে, ‘একটি কঠোর, বিজ্ঞ এবং শক্তিশালী জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মাদক মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে দুইজনের সাক্ষ্য
মিরপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেফতার পাঁচ আসামি রিমান্ডে
ভিসির অনুপস্থিতিতে কুয়েটের শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম স্থবির
আরও ৪টি আরএমজি কারখানা পেল লিড সনদ
মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ীতে সাপের কামড়ে নারীর মৃত্যু
বগুড়ায় দুটি ট্রাকের সংঘর্ষে চালক নিহত
বেগম রোকেয়া পদকের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ২০ জুন
রাজশাহীতে তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
লক্ষ্মীপুরে নিখোঁজের ১২ ঘন্টা পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার
গাজায় ৩ দিন পর ইন্টারনেট সংযোগ পুনরায় চালু
১০