ঢাকা, ১৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ফেডারেল রিজার্ভ) টানা চতুর্থ নীতিগত বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার কমানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানিয়েছে, স্বাধীন ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রতি উচ্চ সুদের হার কিছুটা কমালেও ট্রাম্পের ট্যারিফ বা শুল্কের প্রভাব মার্কিন অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছর সুদের হার স্থিতিশীল রাখা হয়েছে।
গত ডিসেম্বর থেকে সুদের হার ৪.২৫ থেকে ৪.৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা হচ্ছে। কর্মসংস্থান ও মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা নজরে রেখে এই অবস্থান বজায় রেখেছে ফেড।
কেপিএমজির প্রধান অর্থনীতিবিদ ডায়ান সোয়াঙ্ক বলেন, অনিশ্চয়তা এখনো অত্যন্ত বেশি, তাই এই বৈঠকে আমাদের অবস্থান যেন খুব বেশি নজরে না আসে সেটাই প্রত্যাশা’।
তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ না তারা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারছে যে শুল্কের কারণে বা তার হুমকিতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে না, ততক্ষণ তারা নড়াচড়া করবে না।
প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প অধিকাংশ মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন। যদি বিদ্যমান স্থগিতাদেশ বাড়ানো না হয়, তবে জুলাই মাসে বেশ কিছু দেশের ওপর আরও উচ্চ হারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প চীনের সাথেও পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের এক ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও অটোমোবাইল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছেন। যা আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং ভোক্তাদের আস্থা ও মনোভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই শুল্কের প্রভাব ভোক্তা মূল্যস্ফীতিতে দেখা দিতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে।
যদিও সরকারি তথ্য অনুসারে নিয়োগ কিছুটা কমেছে এবং শ্রমশক্তির কিছুটা সংকোচন ঘটেছে, বেকারত্বের হার অপরিবর্তিত রয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতিও কমেছে, যদিও বিশ্লেষকরা ব্যবসায়িক লাভের পরিমাণ কমার লক্ষণ লক্ষ্য করেছেন। যার অর্থ কোম্পানিগুলো আপাতত শুল্কের চাপ বহন করছে।
বুধবার ফেডের দুই দিনের বৈঠক শেষ হলে, বিশ্লেষকরা অর্থনৈতিক পূর্বাভাসগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন—বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব নিয়ে পূর্বাভাসে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা বিশ্লেষণ করবেন। একই সঙ্গে, আসন্ন সময়ে কতবার সুদের হার কমানো হতে পারে, সে সম্পর্কিত কোনো ইঙ্গিত আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবেন।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভ। যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি তথ্য উদ্ধৃত করে দ্রুত সুদের হার কমানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। তার যুক্তি, এই পদক্ষেপ দেশকে "আসন্ন ঋণের উপর অনেক কম সুদ দিতে সাহায্য করবে, যা সরকারের ঋণ পরিশোধে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে।
বুধবার ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার এক শতাংশ পয়েন্ট কমানোর আহ্বান জানান। আর বৃহস্পতিবার তিনি এই অনুরোধে সাড়া না দেওয়ায় পাওয়েলকে "নাম্বস্কুল" (বেকুব) বলেও আক্রমণ করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘যদি মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে, তখন হার আবার বাড়ানো যাবে। তবে পাওয়েল সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে ফেডের স্বাধীন অবস্থান রক্ষা করেছেন।
সতর্ক অপেক্ষা: ইওয়াইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ডাকো বলেন, ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকরা সুদের হার সামঞ্জস্য করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করছেন না।
তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য, কর, অভিবাসন এবং নিয়ন্ত্রণনীতির সম্মিলিত প্রভাব সম্পর্কে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আগেভাগে কোনো পদক্ষেপ নিতে তারা অনিচ্ছুক।
ড্যাকো মনে করেন, পাওয়েল সতর্ক ধৈর্যের বার্তা দেবেন এবং পুনরায় বলবেন যে ফেডের নীতিনির্ধারণ তথ্যভিত্তিক থাকবে।
যদিও অর্থনীতিবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ট্রাম্পের শুল্ক মুদ্রাস্ফীতির গতি বাড়াতে ও প্রবৃদ্ধি হ্রাস করতে পারে। তবে ট্রাম্প সমর্থকেরা বলছেন তার ঘোষিত করছাড় পরিকল্পনা অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করবে।
এই বছরের ফেড নীতির পথে কী আছে, সে বিষয়ে এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ বলেছে, যদি শ্রমবাজার দুর্বল হয় তবে বড় ধরনের হার কমানোর সম্ভাবনা থাকবে। তবে মুদ্রাস্ফীতি বেশি হলে উল্টোটা ঘটবে।
এখনই বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে সেপ্টেম্বরে শুরু করে ফেড আরও দুইবার সুদের হার কমাতে পারে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট বলেন, তারা নিশ্চিত হতে চায় যে সঠিক সংকেত পাচ্ছে।
সোয়াঙ্ক বলেন, বর্তমান মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা কোভিড-১৯ মহামারির সময়কার থেকে ভিন্ন, তাই এখন দাম বাড়লে ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা অনিশ্চিত।
তখনকার মতো সরকারি প্রণোদনার অভাবে ভোক্তারা আগের মতো ব্যয় চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যা ফেডের নীতিতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
সায়াঙ্ক বলেন, যদি এটা শুল্কবিহীন এক বিশ্ব হতো, তাহলে এখনই ফেড হার কমিয়ে দিত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।