শিরোনাম
ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৫ (বাসস) : ভারতের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে নিহত আরোহীদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করছেন। তবে বেশিরভাগ পরিবার ডিএনএ পরীক্ষার ফল না পাওয়ায় এখনও নিহত স্বজনের মরদেহ বুঝে পাননি।
গত বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আরোহীসহ মোট ২৭৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শোকসন্তপ্ত হয়ে অন্তিম শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। তবে অনেকেই এখনও প্রিয়জনের মরদেহ বুঝে নিতে ডিএনই পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন।
বিমান দুর্ঘটনায় বড় ভাই হারানো ২৩ বছর বয়সী রিনাল ক্রিস্টিয়ান বলেন, তারা বলেছিলেন, রিপোর্ট আসতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে, কিন্তু চার দিন পার হয়ে গেল। এখনও কোনো সাড়া পাইনি।
লন্ডনগামী বিমানটিতে থাকা ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের মধ্যে কেবল একজন বেঁচে যান। বিমানটি আহমেদাবাদের একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হওয়ায় সেখানকার ৩৮ জন বাসিন্দাও মারা যান।
রিনাল বলেন,আমার ভাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। এখন আমাদের কী হবে?
নিহতদের মধ্যে শনাক্তকৃত সর্বশেষ ব্যক্তি হলেন ভারতের শাসক দলের সিনিয়র সদস্য এবং গুজরাট রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি।
আহমেদাবাদে সৈন্যরা জাতীয় পতাকায় ঢেকে তার কফিন বহন করে নিয়ে যায়। পাশাপাশি ফুলের মালা পরিয়ে এ রাজনীতিবিদের একটি প্রতিকৃতিও প্রদর্শন করা হয়।
আহমেদাবাদ থেকে দুই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত আনন্দ জেলার যাত্রী কিনাল মিস্ত্রির শোকযাত্রায় হাজারো মানুষ জড়ো হন।
২৪ বছর বয়সী কিনাল প্রথমে তার ফ্লাইট স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু পরে আবার ওই ফ্লাইটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার বাবা সুরেশ মিস্ত্রি আফসোস করে বলেন, যদি সে এই ফ্লাইটে না গিয়ে অন্য ফ্লাইটে যেত, তাহলে হয়তো বেঁচে যেত।
এয়ার ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ , একজন কানাডিয়ান যাত্রী এবং সঙ্গে ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।
গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সংঘভি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১১৪ জন নিহতের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।
আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক রজনিশ প্যাটেল বলেন, এটি (ডিএনএ পরীক্ষা) একটি সূক্ষ্ম ও ধীর প্রক্রিয়া। তাই এটি সতর্কতার সাথে করতে হচ্ছে।
নিহতদের স্বজনদের কেউ কেউ এএফপিকে জানিয়েছেন, কফিনটি গ্রহণের সময় তা না খোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা দগ্ধ মরদেহ এবং ছড়িয়ে থাকা দেহাবশেষ দেখেছেন।
কফিন নির্মাতা নীলেশ বাঘেলা বলেন, বিমান বিধ্বস্তের সময় আমি ঘুমাচ্ছিলাম। পরে সন্ধ্যা ৫টার দিকে এয়ার ইন্ডিয়া থেকে ফোন আসে, কফিন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমার কাজটি খুবই বেদনাদায়ক। এত নিরপরাধ মানুষ মারা গেছে, ছোট ছোট শিশুরাও। তবুও কাউকে না কাউকে এটি করতে হবে।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি উড্ডয়নের পর কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন ধরে যায়। আহমেদাবাদে দগ্ধ এলাকা থেকে ধ্বংসাবশেষ অপসারণের কাজ চলছে। সেখানে সাদা হেলমেট পরিহিত শ্রমিকরা কাজ করছেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনও দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করতে পারেনি এবং এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনারগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশ নিয়েছে।
এয়ারলাইন জানায়, সোমবার উড্ডয়নের পর ‘কারিগরি সমস্যার কারণে’ একটি ড্রিমলাইনার হংকং বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে। এখন পরীক্ষা চলছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রোববার ঘোষণা করেছে, আহমেদাবাদ দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্স, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার হয়েছে। এটি তদন্তে সাহায্য করবে।
বিমানমন্ত্রী রাম মোহন নাইড়ু কিনজারাপু শনিবার জানান, প্রথম ব্ল্যাক বক্সের ডিকোডিং দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে’ বলে তিনি আশা করেন।
আত্মীয়দের মধ্যে ইমতিয়াজ আলী এখনও ভাইয়ের ডিএনএ ম্যাচিংয়ের অপেক্ষায় আছেন এবং তিনি দায়ী বিচার দাবি করেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘পরবর্তী ধাপ হলো দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করা। আমাদের তা জানা প্রয়োজন।’
