ঢাকা, ১৭ জুন, ২০২৫ (বাসস): বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার প্রভাব বিবেচনায় রেখে ব্যাংক অব জাপান (বিওজে) মঙ্গলবার মূল সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়েছে যে তারা সরকারি বন্ড কেনা কমে দিবে।
টোকিও থেকে এএফপি জানিয়েছে, জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহুবছর ধরে জাপানি সরকারি বন্ড (জেজিবি) কিনে আসছিল, যাতে বন্ডের মুনাফার হার (ইল্ড) নিচে রাখা যায়। এটি ছিল অতিমাত্রায় শিথিল মুদ্রানীতির একটি অংশ। যার লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ক্ষতিকর মূল্যহ্রাস (ডিফ্লেশন) দূর করা।
কিন্তু গত বছর যখন দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে এবং ইয়েন দুর্বল হতে থাকে তখন থেকে ব্যাংকটি সেই কর্মসূচি থেকে সরে আসা শুরু করে। এরপর ২০০৭ সালের পর প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়ায় এবং ধীরে ধীরে জাপান সরকারি বন্ড (জেজিবি) কেনা কমিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এরপর থেকে ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে একাধিকবার ঋণের খরচ বাড়িয়ে বর্তমানে তা ০.৫ শতাংশে উন্নীত করেছে, যা গত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে সরকারি বন্ড ক্রয়ের পরিমাণও কমিয়ে যেতে থাকে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধজনিত অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকটি সুদহার আরও বাড়ানোর পথে ধীরে ধীরে হাঁটছে।
মঙ্গলবার ব্যাংকটি সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে জানিয়েছে, তারা সরকারি বন্ড ক্রয়ের গতি কমিয়ে দিবে।
বিওজে জানায়, ২০২৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক থেকে প্রতি প্রান্তিকে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইয়েন বন্ড ক্রয় কমাবে। যা বর্তমানে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইয়েনে (২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) রয়েছে।
কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক ক্যারল কং বলেন, বন্ড ক্রয় হ্রাসের গতি কমালে সুদের হার তুলনামূলকভাবে নিচে থাকবে। যা চলমান বাণিজ্য অনিশ্চয়তার মাঝে অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি (‘সুপার লং’) জেজিবি মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান দাঁড়ায় ১৪৪.৮০, যা সোমবার ছিল ১৪৪.৩০। মূলত বিওজের তুলনামূলকভাবে কম সুদের হার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের ৪.২৫৪.৫ শতাংশ হারের কারণে।
এমইউএফজি-এর বিশ্লেষক লি হার্ডম্যান বলেন, ইয়েনের সাম্প্রতিক দুর্বলতা আংশিকভাবে বিওজের পক্ষ থেকে একটি সতর্ক নীতিগত হালনাগাদের প্রত্যাশাকেই প্রতিফলিত করছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত থেকেও জাপানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
পরবর্তী হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা:
বিওজে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিভিন্ন অঞ্চলের বাণিজ্য নীতি এবং অন্যান্য নীতিমালার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতি এবং দেশীয় কর্পোরেট লাভ হ্রাসের মতো কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যেতে পারে। তবে, ‘সহনশীল আর্থিক পরিবেশসহ অন্যান্য কিছু কারণ অর্থনীতিকে সহায়তা করবে’।
কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক ক্যারল কং আরও বলেন, ‘মার্কিন বাণিজ্য নীতির বিষয়ে আরও স্পষ্টতা না পাওয়া পর্যন্ত ব্যাংকটি সুদের হার বৃদ্ধি স্থগিত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র এবং সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী, ট্রাম্প প্রশাসনের ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক এবং গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের আওতায় রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাপানের পণ্যের ওপর ২৪ শতাংশ ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরে অন্যান্য দেশের সাথে তা এই সিদ্ধান্তত্ম স্থগিত করেন।
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানান, মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি।
সুমি ট্রাস্ট-এর বিশ্লেষক কাতসুতোশি ইনাডোমে বলেন, ‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি, ব্যাংকটি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুদের হার বাড়াতে পারে, কারণ তারা ধাপে ধাপে নীতি স্বাভাবিকীকরণের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তিনি আরও বলেন, দেশীয় চাহিদা স্থিতিশীল থাকবে বলে আমাদের ধারণা। তবে, অর্থনৈতিক অবস্থা আরও উন্নত হলে বিওজে তখন সুদের হার বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।