ঢাকা, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া এবং এর মিত্র দেশ ভারতকে ‘মৃত অর্থনীতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি এবার ভারতের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি বাস্তবায়ন করা হবে বলে স্পষ্ট করেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, বুধবার মধ্যরাতে ট্রুথ সোশাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমি তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। তারা চাইলে একসঙ্গে তাদের মৃত অর্থনীতি ধ্বংস করুক—আমি কিছুই মনে করব না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে খুব কমই বাণিজ্য করি। তাদের শুল্ক হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। একইভাবে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় কোনো বাণিজ্যই নেই। তা যেন সেভাবেই থাকে।’
ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে এবং একই সঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে একটি অনির্দিষ্ট ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর তা এই বক্তব্য এসেছে।
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প জানান, এই শুল্ক শুক্রবার থেকেই কার্যকর হবে।
তবে ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে চলমান বাণিজ্যের কারণে যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা কেমন হবে, এ বিষয়ে ট্রাম্প কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন আক্রমণের কারণে বর্তমানে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার অধীন রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া যদি তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে ১০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
তিনি আরও হুমকি দিয়েছিলেন, নতুন এই ব্যবস্থা হতে পারে ‘মাধ্যমিক শুল্ক,’ যা রাশিয়ার অবশিষ্ট বাণিজ্য অংশীদারদের, যেমন চীন ও ভারতের ওপর প্রয়োগ করা হবে। এতে রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়বে, তবে এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশাল বিঘ্নের ঝুঁকিও রয়েছে।
এই হুমকির জবাবে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ একে ‘মঞ্চস্থ আলটিমেটাম’ বলে ব্যঙ্গ করেন এবং বলেন, ‘প্রতিটি নতুন আলটিমেটামই একেকটি হুমকি, যা যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার মধ্যরাতের পোস্টে ট্রাম্প মেদভেদেভকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি নিজেকে এখনো প্রেসিডেন্ট মনে করেন, তার একটু দেখেশুনে কথা বলা উচিত।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনি খুবই বিপজ্জনক এলাকায় পা দিচ্ছেন!’
ভারতের ওপর ঘোষিত ২৫ শতাংশ শুল্ক এপ্রিল মাসে ঘোষিত হার থেকে কিছুটা কম হলেও অন্যান্য এশীয় দেশের তুলনায় বেশি, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে।
বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারতই ছিল প্রথম কয়েকটি প্রধান অর্থনীতির মধ্যে একটি, যারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিস্তৃত বাণিজ্য আলোচনায় জড়ায়।
তবে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ট্রাম্পের কঠোর শর্তাবলি এবং ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাত পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে অনীহার কারণে এখনো কোনো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি।