ঢাকা, ২০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : আগামী মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফ্রান্সের। এ পরিকল্পনার জেরে মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বিরুদ্ধে ‘ইহুদি বিদ্বেষ’কে উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। ফলে ইসরাইল ও ফ্রান্সের মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করছে।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, এলিসি প্রাসাদ (ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) নেতানিয়াহুর অভিযোগকে ‘জঘন্য’ ও ‘ভুল’ বলে অভিহিত করেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর আরও বলেছে, ‘এখন পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার সময়, বিভ্রান্তি বা অপপ্রচারের সময় নয়।’
মাখোঁকে উদ্দেশ্য লেখা নেতানিয়াহুর একটি চিঠি এএফপি’র হাতে এসেছে। সেখানে লেখা হয়েছে, গত মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পর ফ্রান্সে ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ অনেক বেড়ে গেছে।
আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের বৈঠকে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে গত মাসে ঘোষণা দিয়েছেন মাখোঁ। ইসরাইল তখনই এর তীব্র সমালোচনা করে।
চিঠিতে নেতানিয়াহু মাখোঁকে বলেন, ‘ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে আপনার কথা বলা ইহুদি বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালার শামিল। এটা কোনো কূটনীতি নয়, বরং ফিলিস্তিনকে তোষণ করা। এটা হামাসের কর্মকাণ্ডকে পুরস্কৃত করবে, জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ার ব্যাপারে হামাসের অবস্থানকে আরো শক্ত করবে। ফরাসি ইহুদিদের ওপর হুমকি সৃষ্টিকারীদের সাহস বাড়বে এবং এখন আপনার দেশের রাস্তায় যে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে, তাকে আরও উসকে দেবে।’
গত দুই বছর আগে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক দেশগুলোর তালিকায় ফ্রান্সও যুক্ত হতে যাচ্ছে। এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪৫টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে তথাকথিত ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর পক্ষে কথা বলে আসছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ গাজা শাসনকারী হামাসের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কারণ হামাস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক এবং শান্তি বিরোধী’ বলে অভিহিত করেছে।
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও তার অপরাধের সমালোচনা করা অথবা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও তাদের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সমর্থন করাকে ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার পুরোনো কৌশলটি ফাঁস হয়ে গেছে এবং এখন এতে কেউই বোকা বনে যায় না।’
এদিকে নেতানিয়াহুর ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগের জবাবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর বলেছে, ‘ফ্রান্স তার ইহুদি নাগরিকদের রক্ষা করে এবং সবসময় করবে।’
মাখোঁর দফতর আরও জানায়, নেতানিয়াহুর চিঠিতে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এর জবাব দেওয়া হবে।
ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী বেনিয়ামিন হাদ্দাদ বলেছেন, ‘ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই কীভাবে করতে হবে তা ফ্রান্সকে শেখাতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউরোপীয় সমাজকে বিষিয়ে তোলা এই ইস্যুটিকে কেউ যেন নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে ফায়দা না নেয়।’
ফ্রান্স ইউরোপের বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়ের আবাস। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে ইহুদি বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড ২০২২ সালের ৪৩৬টি থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ১ হাজার ৬৭৬টিতে দাঁড়ায়। এরপর গত বছর তা কিছুটা কমে ১ হাজার ৫৭০টিতে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ারও সমালোচনা করেছেন। কারণ অস্ট্রেলিয়াও আগামী মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজকে একজন ‘দুর্বল রাজনীতিবিদ’ বলে মন্তব্য করেন । নেতানিয়াহু বলেন, তিনি (আলবানিজ) ইসরাইলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার ইহুদিদের পরিত্যাগ করেছেন।
অস্ট্রেলীয় সরকার সোমবার উগ্র ডানপন্থি ইসরাইলি রাজনীতিবিদ সিমচা রথম্যানের ভিসা বাতিল করার পর আলবানিজকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়।