
ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চেহারায় আধুনিকতার ছাপ আর পুরোনো দিনের হেয়ার স্টাইলের এক কিশোরী। তাকে ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ‘১৯৮০-র দশক ডাকছে।’ পটভূমিতে তখন বাজছে সেই দশকের বিখ্যাত রক সঙ্গীত ‘টিয়ার্স ফর ফিয়ার্স’ ব্যান্ডের ‘এভরিবডি ওয়ান্টস টু রুল দ্য ওয়ার্ল্ড’।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
পুরোটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি এই ভিডিও ইতোমধ্যে ইনস্টাগ্রামে ৬ লাখের বেশি ‘লাইক’ পেয়েছে। এটি বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ‘এআই নস্টালজিয়া’ নামে পরিচিত একটি নতুন ট্রেন্ড বা ফ্যাশনের অংশ। তবে আশির দশক পার করা মানুষদের কাছে তা কিছুটা বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।
‘ম্যাক্সিমাল নস্টালজিয়া’ নামের ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্টটি নিয়মিত এমন ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে আশি ও নব্বই দশককে বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর ও নিখুঁত আকারে উপস্থাপন করা হয়।
নরম আলোয় সাজানো এই কল্পনার জগৎ তৈরি হয়েছে এআই টুলের মাধ্যমে। ওপেনএআই-এর ‘সোরা’, গুগলের ‘ভিও’ কিংবা লুমা এআই-এর ‘রে’ দিয়ে এমন ভিডিও বানানো যায়, যা প্রথম দেখায় অতীতের আসল ফুটেজ থেকে আলাদা করা কঠিন।
ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল এআই-এর চোখে অতীতকে দেখাচ্ছে। যখন আইফোন ছিল না তখন তরুণ-তরুণীরা কিভাবে দৈনন্দিন জীবন কাটাতো এবং কিভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতো তা সেখানে দেখানো হচ্ছে।
এই ১৯৮০-র দশকের চিত্রকে যারা জীবন্ত করে তুলছেন, তাদের মধ্যে ২৬ বছর বয়সী উদ্যোক্তা তাভায়াস ডসন অন্যতম। এই অ্যাকাউন্টের পিছনে রয়েছেন তিনিই। অথচ এই সময়ের অনেক পরে তার জন্ম।
আশির দশকের এই কল্পনার জগৎ জীবন্ত করে তুলছেন টাভাইয়াস ডসন। সেই সময়ের অনেক পরে জন্মানো ২৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা অ্যাকাউন্টটির আসল মালিক।
ডসন এএফপিকে বলেন, ‘স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যারা জন্মেছেন, তারা হয়তো এমন একটি সময়ে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা করেন, যখন এসব নিয়ে তাদের চিন্তা করতে হতো না।”
ডসন এএফপিকে বলেন, স্মার্টফোন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে যারা জন্মেছে, তারা প্রায়ই ভাবে, ইলেকট্রনিক্স গেজেট বিহীন সময়ে জন্মাতে পারলে ভালো হতো। কোন ভাবনা-চিন্তা থাকতো না।
যারা আশির দশককে কাছ থেকে দেখেছেন, তারা সহজেই এআই ভিডিওর কিছু অসঙ্গতি ও সূক্ষ্ম ভুল ধরতে পারবেন। যেমন তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে— তখন কি নিউইয়র্ক সিটিতে বাইক লেন ছিল?
তবু আশির দশক এআই নস্টালজিয়ায় বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করেছে। সেই সময়ের অনেক পরে জন্ম নেওয়া তরুণরাও এতে মুগ্ধ হচ্ছে।
‘ম্যাক্সিমাল নস্টালজিয়া’সহ ‘পিউরেস্ট নস্টালজিয়া’ বা ‘ইউটোপিক.ড্রিমার’ মতো চ্যানেলগুলো শান্ত শহরতলি আর নগরীর রাস্তার দৃশ্য দেখায়। যেন সেই সময়ের মন ভালো করা সিনেমার দৃশ্যগুলো আবার জীবন্ত হয়ে উঠছে।
আবার, এসব ভিডিওতে আশির দশকের বৈষম্য, এইডস মহামারি আর ক্র্যাক কোকেন আসক্তির বিষয়ে কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। বরং দেখা যায় বড় চুলের স্টাইল, উজ্জ্বল পোশাক আর ফোলা কাঁধ, যা সেই সময়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান অধ্যাপক আনা বেহলার বলেন, ‘মানুষ পঞ্চাশ বা ষাটের দশককে রোজ-কালার্ড গ্লাসেস (গোলাপী চশমা) দিয়ে দেখে। তখনকার অনেক অস্থিরতা ভুলে যায়। এখন আমরা আশির দশকেও একই জিনিস দেখছি।’
ডসন স্পষ্ট করে বলেন, তার ভিডিওগুলো ইতিহাস দেখানোর জন্য নয় কেবলই মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
তবে বেহলার সতর্ক করে বলেন, এসব এআই ভিডিও এতটাই বাস্তবসম্মত যে অতীত আর কল্পনার মধ্যে সীমারেখা ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
যদিও এআই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, তবুও নস্টালজিয়া তৈরি করতে এটি ফিরে যায় দূর অতীতে। একাকী সময়ে তা মানুষের মনে স্বস্তি দেয়।
নেপচুনিয়ান গ্লিটার বল’ চ্যানেলের নির্মাতা সাইমন পারমেগিয়ানি বলেন, ‘নস্টালজিয়া কোনো ফাঁকিবাজি নয়, এটা আবেগের টিকে থাকার উপায়।’
আশির দশক পার করে আসা প্রসাধন শিল্পের বিক্রয় পরিচালক অ্যালিসিয়া ওয়েস্ট ফ্যানচার ভিডিওগুলো দেখে গভীরভাবে আবেগাপ্লুত হন।
ফ্যানচার এএফপিকে বলেন, ‘আমার চোখ ভিজে এসেছিল। এটি মোটেও কাল্পনিক চিত্র নয়, তখনকার সময়টা আসলে এমনই ছিল।’
ডসন এখন এআই ছেড়ে লাইভ-অ্যাকশন ভিডিও বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেগুলোও আশি ও নব্বই দশকের পটভূমিতে তৈরি হবে।
ডসন বলেন, ‘একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, নস্টালজিয়া কখনো ম্লান হয় না।’