সারাদেশে অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে ১০ হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে : মহাপরিচালক

বাসস
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩০ আপডেট: : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৫২
আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। ছবি : বাসস

মোশতাক আহমদ

ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সরকার সারাদেশে অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে ১০ হাজার মিডওয়াইফারি নার্স নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। আড়াই হাজারেরও বেশি এখন কর্মরত আছে। বাকীদের নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এ কথা বলেছেন। 

আজ রাজধানীর মহাখালীতে অধিদপ্তরের নিজ অফিস কক্ষে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।   

মহাপরিচালক বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ টি মিডওয়াইফারির পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে ২ হাজার ৬০০ মিডওয়াইফ সারাদেশের ইউনিয়ন সাব সেন্টার, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এবং জেলা হাসপাতালে কর্মরত আছে। এই মিডওয়াইফ নিয়োগের ফলে আমাদের এএনসি(প্রসব পূর্ব যত্ন) ও পিএনসি(প্রসবোত্তর যত্ন) বেড়েছে। এর প্রভাবে আমাদের ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারিও বেড়েছে।

তিনি বলেন, মিডওয়াইফারি নার্সদের সক্ষমতা ও আন্তরিক কাজের কারণে নরমাল ডেলিভারি বেড়েছে এবং সিজারিয়ান সেকশন কমছে। আসলে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধ করার ক্ষেত্রে স্টান্টিং ওয়েস্টিং কমানো এবং আমাদের মা ও শিশুদের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে এই মিডওয়াইফদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া এদের ইন্টারভেনশনের কারণে অপ্রয়োজনীয় সিজারের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। সিজারের সংখ্যা কমে আসায় খরচ ও জটিলতাও কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে  এসব মিডওয়াইফ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। 

মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে কর্মরত মিডওয়াইফারি নার্সের সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ জন। নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ জনের। আরো ৪ হাজার ৪৪৫ জনের নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠানো আছে । এ ছাড়া আরো নতুন ৪ হাজার পদসৃষ্টির প্রস্তাব তৈরীর কাজ চলমান আছে। সব মিলে আগামী দুই বছরের মধ্যে ১০ হাজারের মত মিওয়াইফারি দক্ষ নার্স আমরা সারাদেশে নিয়োগ দিতে সক্ষম হবো। যারা গর্ভবর্তী মায়েদের নরমাল ডেলিভারীতে কাজ করতে পারবে। 

তিনি বলেন, আগামীতে নবসৃষ্ট পদগুলোতে আগত মিডওয়াইফরা সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের সাব সেন্টার, জেলা ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এবং বিভাগীয় যে স্পেশালাইজ হসপিটাল সেগুলোতে ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলোতেও  কাজ করার সুযোগ পাবে। ফলে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। 

মহাপরিচালক আরো বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের  ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা আরো ৪ হাজার মিডওয়াইফের নতুন পথ সৃজনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা সম্মতি পেয়েছি। আরো ৯১৮ জন মিডওয়াইফের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)  ইতোমধ্যে তাদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। 

মহাপরিচালক বলেন, আমরা আশা করছি যে অতি দ্রুত এই ৯১৮ জন মিডওয়াইফ চলমান হেলথ ওয়ার্ক ফোর্সে যুক্ত হবে। 

তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নার্সিং ও মিডাইফারি অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এসব মিডওয়াইফ আমাদের দেশে গর্ভবতী নারীদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ঐতিহাসিক বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। 

তিনি বলেন, মিডওয়াইফদের কর্মসংস্থানের জন্য নতুন পদ সৃজনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা সফলভাবে করা গেলে আগামী দিনে আমাদের মাতৃ ও শিশু মৃত্যুও অনেকাংশে কমে আসবে। 

মহাপরিচালক বলেন, মেধাবী শিশু জন্মের জন্য নরমাল ডেলিভারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নরমাল ডেলিভারির অনেকগুলো পজিটিভ দিক আছে। 

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে যেখানে ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট সিজারিয়ান সেকশন হয় সেখানে আমাদের দেশে ৬৫% সিজারিয়ান সেকশন হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে আমাদের দেশে যত শিশু জন্ম নিচ্ছে তার ৬৫ শতাংশ সিজারিয়ানের মাধ্যমে হচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। 

মহাপরিচালক বলেন, আমরা দেখছি যে কোন বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে সিজারিয়ান শিশু জন্মের হার আরো অনেক বেশি। কিন্তু আমরা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আগামীর শিশুকে মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সুস্থ ও মেধাবী হয়ে জন্ম নেয়া শিশুরাই আগামীতে বাংলাদেশকে আরো উন্নত করবে। 

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি মিডওয়াইফারিতে অভিজ্ঞ  ও দক্ষ নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে দেশের দুর্গম এবং নিভৃত অঞ্চলেও গর্ভবতী নারীরা তাদের বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারীর ব্যাপক সুযোগ পাবে। 

তিনি আরো বলেন, যেসব এলাকায় প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফরা কর্মরত আছে সেসব এলাকায় আমাদের ইনস্টিটিউশনাল নরমাল ডেলিভারি বাড়ছে। বিশ্বজুড়েই নরমাল ডেলিভারির প্র্যাকটিস অনেক বেশি। সিজারিয়ান সেকশন কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরাও সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের চিকিৎসক ডা. আকিফা জাহান বলেন, একটি নরমাল ডেলিভারীর জন্য ৬ থেকে ১২ ঘন্টা সময় দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় হাসপাতালগুলোতে সেই পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। তাই অনেক পরিবারকে সময় বাঁচাতে ও গর্ভবতী নারীর কষ্ট কমাতে সিজারিয়ান পদ্ধতির প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। কিন্তু যদি মিডওয়াইফারি নার্সরা এ ক্ষেত্রে তাদের পর্যাপ্ত সময় ও সক্ষমতা দেখাতে পারে তবে আগামীতে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট দিবস উদযাপন
বাতিল হচ্ছে ১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট 
বাংলাদেশের রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজিম উদ্দিনকে দেখতে গেলেন ডা. রফিক
সার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে: কৃষি উপদেষ্টা
ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ হারল বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে সহায়তা দেবে কসোভো
এআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া বিশ্বের প্রথম ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি 
আল-ফাশের হাসপাতালে ৪৬০ জন নিহতের খবরে হতবাক ডব্লিউএইচও
সুদানে আরএসএফ’র বর্বরতার নিন্দা জানালো ইইউ
১০