ক্যান্সারের চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসকের পাশাপাশি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন : এনআইসিআরএইচ পরিচালক

বাসস
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩১
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ)-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর। ছবি : সংগৃহিত

কবির আহমেদ খান

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ক্যান্সার মানে আতংক। ক্যান্সার মানেই মৃত্যুভয়। তবে যথাসময়ে ক্যান্সার রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার মাধ্যমে এ ভয় অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। 

ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ)-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সঙ্গে সম্প্রতি এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের ক্যান্সার চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা, ওষুধ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, যে হারে ক্যান্সারের রোগী বেড়ে চলেছে তাতে চিকিৎসার জন্য যেমন দক্ষ চিকিৎসক প্রয়োজন তেমনি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিরও দরকার। ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় ক্যান্সার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে বর্হিবিভাগে ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ডে-কেয়ারে রোগী আসে ৩শ জনের মতো। অথচ ৫শ শয্যার এ হাসপাতালে জনবল রয়েছে মাত্র ৩শ শয্যার। 

তবে আশার কথা চলতি অর্থ বছরে ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ২শ ৭০ কোটি টাকা এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া মেশিন কেনার জন্যেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এ পরিমাণ খুবই কম। দরকার অন্তত ৪শ কোটি টাকা বরাদ্দ। তাতে চিকিৎসা ব্যবস্থা গতিশীল হবে। ডে-কেয়ারে প্রতিদিন ২শ থেকে ৩শ রোগী আসে। রোগীদের কিছু ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হয়। বাজেট বাড়লে পুরোপুরি দেয়া সম্ভব হবে। আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে ১ হাজার রোগী আসে। হাসপাতালে ৩টি ভবনে ৪টি ব্লকে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। 

জাহাঙ্গীর কবীর আরো বলেন, দেশের ক্যান্সার রোগীদের রেডিয়েশন থেরাপির জন্য প্রয়োজন ১৮০টি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর মেশিন। অথচ সারা দেশে রয়েছে মাত্র ২৪টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অথচ দেশে প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হচ্ছে ২ থেকে ৩ লাখ। আর মোট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।

হাসপাতালে জনবলের ঘাটতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে ৫শ শয্যা চালু করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো যায়নি। ফলে ৩শ’ শয্যার জনবল দিয়ে ৫শ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। 

তবে ইতোমধ্যে বাড়তি জনবলের অনুমোদনের জন্য সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৩১৯ জন নতুন জনবল নিয়োগ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।  

ক্যান্সার চিকিৎসায় তিন পর্যায়ের চিকিৎসা রয়েছে উল্লেখ করে বাসস’কে তিনি জানান, জটিল এ রোগের চিকিৎসায় সার্জারী, রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপীর প্রয়োজন হয়। রেডিয়েশনের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা রয়েছে। ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে ২টি মেশিন রয়েছে রেডিয়েশনের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)তে ১টি, সিএমএইচ এ ১টি ও সাভার নিউক্লিয়ার মেডিসিন এ ১টি রেডিয়েশন মেশিন রয়েছে। 

দেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় সার্জনের সংখ্যা ৭০ জনের মতো। রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির চিকিৎসক রয়েছেন আনুমানিক ৩শ জন। প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই কম। সার্জারি চিকিৎসায় কমপক্ষে ৩শ এবং রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপিতে ৮ থেকে ৯শ জন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। 

জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, হাসপাতালে এমআরআই ও মেমোগ্রাম মেশিন নেই। রেডিয়েশনের জন্য ২টি নতুন মেশিন ক্রয়ের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আরও ১টি কেনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। মেশিন কম থাকার কারণে রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে একজন রোগীকে আট মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। আর সার্জারীর ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হয়।

হাসপাতালের ক্যাম্পাস তুলনামূলক ছোট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যান্সার রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সারা দেশে কমপক্ষে ১০টি হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন। ক্যান্সার রোগীরা কেন বিদেশে বিশেষ করে ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়-এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যান্সার ইনস্টিউটটের পরিচালক বলেন, দেশের মানুষের কিছুটা মানসিক দৈন্যতাও এ জন্য দায়ী। আবার চিকিৎসকদের ব্যবহার ভালো করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। গণমাধ্যমের ভূমিকাও এক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রতি সরকারের ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ সুস্থ মানুষ গড়তে না পারলে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ক্যান্সার চিকিৎসায় সার্জারী, রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির জন্য দক্ষ চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী তৈরীর স্বার্থে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণও আরো বাড়ানো দরকার বলে তিনি মনে করেন। 

নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে হবে। আর সুচিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কোন বিকল্প নেই। 

তিনি জানান, তবে ইতোমধ্যে সরকার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বাদে দেশের ৮টি বিভাগীয় হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স হলে সম্প্রতি আয়োজিত এক সেমিনারে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি। অর্থাৎ প্রতি লাখে ১১৪ জন ক্যান্সারের রোগী। 

সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। ২০২২ সালে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ ও মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন। 

মরণব্যাধী ক্যান্সার যথাসময়ে শনাক্ত, প্রয়োজনমতো চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের সুযোগ বাড়ানো গেলে এর চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব বলে সেমিনারে উল্লেখ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
অপ ও অসত্য তথ্য প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সভা অনুষ্ঠিত
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের স্বস্তি প্রকাশ
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে কচুয়ায় আনন্দ মিছিল
ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি : ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে
জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দণ্ডিত আসামির বক্তব্য প্রচার না করার অনুরোধ জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৫ জন গ্রেফতার
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
জলবায়ুজনিত ক্ষতিপূরণ তহবিল ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে : ফরিদা আখতার
২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে যান চলাচল সীমিত থাকবে
বরগুনার সাবেক এমপি মতিয়ার রহমান আর নেই
১০