দিনাজপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলে হামলা, আহত হন ১২ জন

বাসস
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৮:০২
জুলাই আন্দোলনে দিনাজপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ প্রশাসন। ছবি: বাসস

রোস্তম আলী মণ্ডল

দিনাজপুর, ২৯ জুলাই ২০২৫ (বাসস): জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গতবছর ২৯ জুলাই সারাদেশই ছিল উত্তাল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত হন। মূলত এ দিনের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন জনতাও।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতি পুতিরা কেউ মেধাবী না? যত রাজাকারের বাচ্চা নাতি পুতিরা মেধাবী?’ উক্তির প্রতিবাদ জানান সারাদেশের শিক্ষার্থী সমাজ। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড় এবং দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। 

দিনাজপুর-দশ মাইল মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল শহরের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গণ সংলগ্ন এলাকা। 

এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কতিপয় সন্ত্রাসী লাঠি-সোটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার ঘটানোর পর আন্দোলনকারীরাও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইট, পাটকেল নিক্ষেপ চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী।

এ সময় শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হন। পরে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকে শহরে থমথমে ও উত্তপ্ত অবস্থা চলছিল। ঘটনার পর দিনাজপুর শহরে ও হাইওয়েতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করে টহল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এরপরও আন্দোলনকারী তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটেনি।

দিনাজপুর শহরে মুন্সিপাড়া মহল্লার যুবদল কর্মী আহত রেজানুল ইসলাম সিজান (৩৪) বলেন, আমরা আহত যে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম,তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ হাসপাতালে খোঁজ নিতে গিয়েছিল। 

হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও নার্সদের মুখে শুনে ছিলাম, আমাদের পুলিশের অধীনে চিকিৎসা নিতে হবে। বিষয়টি টের পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যার আগে গ্রেপ্তার এড়াতে চিকিৎসা না নিয়েই পালিয়ে এসেছি। পরে জানতে পারি সেদিনের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। হাসিনার সরকারের নির্দেশে পুলিশ আন্দোলনকারী এবং বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।

তৎকালীন সময়ে দিনাজপুর কোতোয়ালী থানার ওসি মো. ফরিদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছিলেন, চলমান পরিস্থিতি তারা ধৈর্য সহকারে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আইনজীবী মো. মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, গতবছর কোটা বিরোধী আন্দোলনে ২৯ জুলাই শহরে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়ে ছিল। এ ঘটনার পর জেলার ১৩ থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার শুরু হয়। 

তিনি বলেন, পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। অনেক নিরীহ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়েছিল। এ ঘটনার মধ্যেও ছাত্রদের আন্দোলন বেগবান করতে আমরা নেতাকর্মীরা সবসময় তাদের সহযোগিতা করেছি। ফলে এ আন্দোলন সফল হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কবিষয়ক বৈঠক চলছে
ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় প্রশাসনকে শিবিরের ধন্যবাদ
কমিউনিটিভিত্তিক মডেলে মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনা করবে ডিএনসিসি
ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
৬ষ্ঠ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্কোয়াশ ওপেনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
আগামী ৩ কার্যদিবসে দপ্তর সমূহে ওয়েবসাইট না থাকার ব্যাখা চেয়েছে মাউশি
পাবনায় রাইস এজেন্সির মালিকের কাছে চাঁদা দাবি, আটক ২
২৮ জুলাই ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের সময় অগ্নিকাণ্ডের কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি
১০০ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’ ৩১ জুলাই
পাঁচ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে : নাহিদ ইসলাম
১০