মুহাম্মদ নূরুজ্জামান
খুলনা, ২৯ জুলাই ২০২৫ (বাসস): কারফিউ শিথিল হওয়ায় এই দিনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)’র দেয়ালে দেয়ালে স্লোগান ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীরা। ২৯ জুলাই দুপুর দুইটা থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হল গেটে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার, গুম, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও হল ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি প্রতিফলিত হয় এসব দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিতে।
গ্রাফিতি অঙ্কনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ২৯ জুলাই বেলা ১টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রোড এলাকায় জড়ো হন। তারা নিজেদের সংগৃহীত টাকা দিয়ে রং ও তুলি কিনে শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করেন। শিক্ষার্থীদের দেয়াল লিখনের মধ্যে ছিল ‘পানি লাগবে পানি?’, ‘You can cut all the flowers but cannot keep the spring from coming’, ‘Ready to fly’, ‘Stop talking’ ইত্যাদি।
দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতির বেশিরভাগ জুড়েই ছিল ১৮ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি বিতরণের সময় ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত খুবির প্রাক্তন ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর স্মৃতি ও প্রতিকৃতি। এছাড়া মীর মুগ্ধর স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত প্রধান ফটকের নাম ‘মীর মুগ্ধ তোরণ’ রাখার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে খুবির প্রধান ফটকের নাম ‘মীর মুগ্ধ তোরণ’ রাখা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত নগরীর সোনাডাঙ্গা, হরিণটানা, দৌলতপুর ও খালিশপুর থানায় পুলিশ পৃথক চারটি মামলা দায়ের করে। নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় ২০০ থেকে ২৫০ জন, দৌলতপুর থানায় ২০০ থেকে ২৫০ জন এবং হরিণটানা থানায় ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া খালিশপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। পুলিশ চারটি নাশকতা মামলায় ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১০৩ জনকে গ্রেফতার করে।
কোটা আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতি থেকে জানমালের নিরাপত্তা বিধান, সরকারি সম্পত্তি ও স্থাপনার নিরাপত্তা বিধান এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় কারফিউ চলছিল। ২৯ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয় এবং রাত ১০টা থেকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ডিসিপ্লিনের স্নাতকোত্তর ক্লাসের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরের সেসময়কার মুখপাত্র মো. আহাদ হোসেন বাসসকে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ করে দেওয়ার পর ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক ‘অদম্য বাংলার চোখ-মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিই। এটি ছিল আমাদের একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের গেটের বাইরে যেতে নিষেধ করেন এবং নিষেধ অমান্যকারীদের গুলির নির্দেশ রয়েছে বলে জানান। এ রকম শঙ্কার মধ্যেই আন্দোলন অব্যাহত থাকে।