মোহাম্মদ নুর উদ্দিন
হবিগঞ্জ, ৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : একদফা দাবিতে সারাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন হবিগঞ্জে আজকের দিনে (৫ আগস্ট) পুলিশের গুলিতে নিহত হন শিশুসহ ৯ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিল অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। এ জেলা ছিল সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিহতের তালিকায়।
২০২৪ এর ৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে খবর আসে স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন খবরে বানিয়াচং ছাত্রজনতা মিছিল নিয়ে বের হলে থানা প্রাঙ্গণে ওত পেতে থাকা আওয়ামীলীগ ও পুলিশ বাধা দেয়। তখন শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শিশুসহ নিহত হন ৯ জন। আহত হয়েছিল আরো ৫০এর বেশি।
নিহতরা হলেন, বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা মহল্লার হাসান মিয়া (১২), মাঝের মহল্লার আশরাফুল ইসলাম (১৭), পাড়াগাও মহল্লার মোজাক্কির মিয়া (৪০), কামালখানি মহল্লার নয়ন মিয়া (২০), যাতুকর্নপাড়া মহল্লার তোফাজ্জল (১৮), পূর্বঘর গ্রামের সাদিকুর (৩০), কামালখানি গ্রামের আকিনুর মিয়া (৩২), খন্দকার মহল্লার আনাছ মিয়া (১৮) ও সাগরদিঘি এলাকার সোহেল আখঞ্জী (৩৫) ।
সকাল ১০টার দিকে যখন খবর আসে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সারা জেলা দখল নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে ছাত্রজনতা। তাদের ভয়ে পুলিশ ব্যারাকে অবস্থা নিলেও বানিয়াচং থানা পুলিশ ছিল সক্রিয়। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব ছিল না।
খবর পেয়ে বানিয়াচং জেলার হাজার হাজার ছাত্রজনতা থানায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বানিয়াচং থানার ওসিসহ অন্তত ৫৫জন পুলিশকে। অবরুদ্ধ করে থানা প্রাঙ্গণের চারদিকে ঘেরাও করে রাখে ছাত্রজনতা। কেউ বের হতে পারেনি থানা থেকে।
এছাড়াও উত্তেজিত জনতা পুরো বানিয়াচং থানা ও আশপাশের এলাকা ঘেরাও করে রাখে। দিনভর ঘেরাওয়ের পর সন্ধ্যার দিকে সেখানে যান সেনাবাহিনীর একাধিক টিম। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে না পারায় ৫৫ জন পুলিশ সদস্যের প্রাণ বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর একাধিক টিম তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে উদ্ধার করা হয় ৫৫ জন্য পুলিশ সদস্যকে।
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন জানান, সেদিন ছিল ভয়াবহ অবস্থা। আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফোনে কথা বলে গভীর রাতে সেখানে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। আমার আগে সেখানে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ। এছাড়াও আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছে। সেদিন হবিগঞ্জ এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। দেশের মানুষের জন্য আমার এলাকার ৯ জন শহীদ হয়েছে। দিনটি আমাদের ভোলার নয়। অবশেষে এভাবেই অবসান হয় ১৬ বছরের স্বৈরাচারের নিপীড়ন।