সুনামগঞ্জ, ৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): কে আছো জোয়ান হও, আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। এভাবেই কোন প্রকার নেতৃত্ব ছাড়াই ফ্যাসিস্টকে তাড়াতে মাঠে নেমেছিল ছাত্রজনতা। ৫ আগস্ট ২০২৪ সুনামগঞ্জ শহর নীরব নিস্তব্ধ। সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় ছিল ফ্যাসিস্ট সরকার কখন বিদায় হবে। মা তার সন্তানকে হারিয়ে বুকফাটা কান্না করছে। কিন্তু, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভাষণ দেওয়ার জন্য দিওয়ানা ছিলেন। কিন্তু, গ্রাম থেকে শহর সকল স্তরের মানুষ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে এই প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামছিল। সুনামগঞ্জ শহরে ঐ দিন ছাত্রজনতাসহ গ্রামগঞ্জের মানুষ ফ্যাসিস্ট পলায়নের অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে দেশ ত্যাগ করলো। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় শহর, গ্রাম থেকে আনন্দের মিছিল আসতে শুরু করে। শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে সভা হয়। অন্যদিকে, ছাত্রজনতা পেটুয়া বাহনীকে ধরার জন্য সুনামগঞ্জ সদর থানা ঘেরাও করেছিল। গণমাধ্যম কর্মীরা ঐ সময় ছাত্র জনতাকে থানা রক্ষা করতে হবে বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল। সারাদেশে তখন শকুনের দল খামছে ধরে হায়েনাদের মতো তরতাজা যুবক, বৃদ্ধ বণিতাকে হত্যা করেছিল শাসক গোষ্টি।
স্বজন হারানোর ১ বছর পূর্ণ হলেও এসব শহীদ পরিবারের সদস্যদের গগনবিদারী কান্না আজও থামেনি। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে শহীদ পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ দুইয়ে মিলে দিশেহারা দরিদ্র পরিবারগুলো। সরেজমিনে এমনই চিত্র দেখা গেছে। গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভও রয়েছে তাদের।
সুনামগঞ্জের শহীদ আয়াত উল্লার বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, তার সন্তান শহীদ হয়েছে দেশের জন্য। তবে, দেশে যেন আর স্বৈরশাসক কায়েম না হয় এটাই তাদের কামনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ মোহাম্মদ হৃদয় শৈশব থেকেই ছিলেন পিতা মাতার স্নেহবঞ্চিত। কিন্তু এই আন্দোলনে শহীদ হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে সুনামগঞ্জবাসীর হৃদয়ে। তবে তার ঠাঁই হলো না নিজ জন্মভিটায়। মৃত্যুর পরে শেষ ঠিকানা হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সিদ্ধিরগঞ্জ পুল মিজমিজি বাতানপাড়ার পাইনাদি কবরস্থানে।
হৃদয়ের মামা হারেস মিয়া বলেন, ২৪এর ২০ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কপালের ডানদিকে পুলিশের গুলিতে মারা যায় আমার ভাগনে। তিনি বলেন, ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্বের কারণেই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় হয় হৃদয়।
হৃদয়ের খালা শাহিদা বেগম জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরউদ্দিন মিয়া হৃদয়ের লাশ দ্রুত দাফনের জন্য চাপ প্রয়োগ করায় তারা সুনামগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেননি। সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় মো. হৃদয়ের মরদেহ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের মিজমিজি বাতানপাড়ার পাইনাদি কবরস্থানেই দাফন করা হয়।
শহীদ সোহাগের বাবা আবুল কালাম ও মা মোছা. রোকেয়া বেগম জানান, শহীদ সোহাগের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সোহাগ পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয়। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পাল্টে যায় পরিবারটির চিত্র। কারণ, এদিন সোহাগ শেখ হাসিনার পতনের খবর শুনে ঢাকার বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিল। আর পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিল সোহাগ। সোহাগ মিয়ার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুরে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সমন্বয়ক ইমন দোজা জানান, তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে দু’দফায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা শহীদ সোহাগের পরিবারকে দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, তিনি সুনামগঞ্জে যোগদানের পরপরই শহীদ সোহাগের কবর জিয়ারত করেছেন। জেলা প্রশাসক আরো জানান, শহীদ সোহাগের পরিবার অভিযোগ করেছে, সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে এক দালাল তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তাকে সৌদিতেও পাঠায়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানানো হয়েছে।