বারবার জায়গা বদল করে আত্মগোপনে থেকেও জুলাইয়ে লড়াই করেছি : সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী 

বাসস
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫৬ আপডেট: : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২০:৩৫
সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী। ছবি : ফেসবুক

মোতাহার হোসেন

ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : তখন রাস্তায় রক্ত পড়ছিল, চোখ বাঁধা অবস্থায় শরীরে পড়ছিল লাঠির আঘাত, আর কোনো এক ছাত্র চিৎকার না করে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছিল— কারণ সে জানত, এ লড়াই শুধু চাকরির জন্য নয়, বাঁচার জন্য।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রজন্মের জাগরণে। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ধাপে ধাপে হয়ে ওঠে একটি রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন বিরোধী প্রতিরোধের নাম।

এই ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি অংশগ্রহণকারী ছিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী। রাজপথের মিছিল, পুলিশের গুলির শব্দ, হামলার যন্ত্রণা, আত্মগোপনের দিনরাত্রি— সব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে। এখানে উঠে এসেছে কীভাবে একটি ন্যায্য দাবি রাষ্ট্রের চোখে অপরাধে পরিণত হয়, আর কীভাবে এক ছাত্রনেতা দাঁতে দাঁত চেপে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাসসের প্রতিবেদক মোতাহার হোসেন।

বাসস: আপনি বর্তমানে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত? রাজনীতিতে কীভাবে এলেন?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা কলেজ শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

কলেজ জীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হই, কারণ এই আদর্শ স্বাধীনতা, জাতীয় স্বার্থ ও গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দেয়। তখন থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছি।

বাসস: কোটা আন্দোলন সম্পর্কে কিছু বলুন। কখন থেকে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে বলে আপনার ধারণা?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন, যা মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং অপ্রয়োজনীয় বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোটা বাতিল বা সংস্কার করা।

দেখুন, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন প্রচলিত ছিল। ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত ছিল এটি। ফলে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ অনেক প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে ২০১৮ সাল থেকেই, তবে তা ছড়িয়ে পড়ে ও ব্যাপকতা পায় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। আমার ক্ষুদ্র বিশ্লেষণে, এই আন্দোলনের বীজ ২০১৮ সালে বপন হয়েছিল, তবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এটি সর্বজনীন ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে তাদের দাবি জানান।

বাসস: কোটা সংস্কার আন্দোলন কয়েকটি ধাপে এগিয়েছে। এই আন্দোলনে আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন? আপনি আন্দোলনের কোন সময়টাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন? শুরু থেকেই আন্দোলনের প্রতি আপনার কি সমর্থন ছিল?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: কোটা আন্দোলনের সময় আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ছিলাম। এ কারণে এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরাসরি যুক্ত ছিলাম। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন প্রথম দিকের পর্যায়ে ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিছু ছাত্রছাত্রী মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি তুলছিল, তখন থেকেই আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা শুরু করি।

আমার ও আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এই আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ছিল। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের চাকরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া উচিত। অব্যবস্থাপনা ও পক্ষপাতদুষ্ট কোটাব্যবস্থা একটি প্রজন্মকে হতাশ করে দিচ্ছিল।

সংক্ষেপে বললে, আন্দোলনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলাম। আমি ও আমার সংগঠন আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিই এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের সময় প্রতিবাদী অবস্থানে ছিলাম। আমরা মনে করি, এই আন্দোলন শুধু চাকরির দাবি ছিল না— এটি ছিল বিচার ও ন্যায়ের প্রশ্নে একটি প্রজন্মের সোচ্চার হওয়ার প্রতিফলন।

বাসস: ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিন্তু এ আন্দোলনে সবাই একজোট হয়ে অংশ নিয়েছে। বিষয়টি আপনার কেমন লেগেছে? এই সংঘবদ্ধ হওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: ছাত্ররাজনীতির বাস্তবতায় আদর্শিক দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়— জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতা কিংবা তাদের সংগঠনের মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে আসছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমরা দেখেছি এক ব্যতিক্রমী চিত্র— বিভিন্ন মতাদর্শের ছাত্র সংগঠন, এমনকি রাজনীতির বাইরে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে একত্রিত হয়েছে।

এই সংঘবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে খুবই ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণাদায়ক লেগেছে। আমরা ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে বরাবরই বিশ্বাস করি, ছাত্রসমাজই জাতির বিবেক, আর সে বিবেক যখন অন্যায়, বৈষম্য কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক হয়, তখন সেটি খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

বাসস: আন্দোলনে কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল বলে আপনার মনে হয়?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: কোটা সংস্কার আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন ছিল। তবে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। আন্দোলনের পথ খুব সহজ ছিল না এবং নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। এই চ্যালেঞ্জগুলোর বিভিন্ন স্তর ছিল, যা আন্দোলনকে কখনো শক্তিশালী, কখনো দুর্বল করেছে।

প্রথমদিকে, সরকার ও প্রশাসন কোটা সংস্কারের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। আন্দোলন শুরু হওয়ার পরও সরকার বারবার এ বিষয়ে লুকোচুরি করার চেষ্টা করেছিল। আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে, তখন তারা কোটা সংস্কারের ঘোষণা দেয়। কিন্তু তখনো আসলে সংস্কারের সঠিক রূপরেখা পরিষ্কার ছিল না।

এটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ— সরকারের অদূরদর্শিতা ও অনাগ্রহ আন্দোলনকে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছিল।

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়ন চালায়। ছাত্রদের ওপর হামলা, গণগ্রেপ্তার এবং বিভিন্ন রকমের রাজনৈতিক পুলিশিং আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার আন্দোলনের প্রাণপ্রবাহকে অনেকটা বাধাগ্রস্ত করেছিল। অন্যদিকে এটি আন্দোলনের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দমনপীড়ন ও ভয়ভীতি। পুলিশি হামলা, গ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলা অনেক শিক্ষার্থীকে আতঙ্কিত করে তোলে।

পাশাপাশি গুজব ছড়ানো, নেতৃত্বের ওপর চাপ, রাজনৈতিক অপপ্রচার এবং সারাদেশে সংগঠিতভাবে সমন্বয় করার সমস্যা আন্দোলনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। তবে সব বাধা পেরিয়েই এই আন্দোলন সফল হয়েছে— এটাই আমাদের প্রেরণা।

বাসস: গণগ্রেপ্তারের সময়ে আপনারা কীভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন বা আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আপনারা কীভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: গণগ্রেপ্তারের সময়টা ছিল সত্যিই ভয়াবহ। ক্যাম্পাস, বাসা, এমনকি হোস্টেল থেকেও শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া হতো। আমরা অনেক সময় ছদ্মবেশে মিটিং করতাম, কখনো লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যোগাযোগ চালিয়ে যেতাম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, মেসেঞ্জার— এসব ছিল আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবার মূল মাধ্যম। আমাদেরকে বারবার জায়গা বদল করে আত্মগোপনে থেকেও এই আন্দোলনে কাজ করতে হয়েছে।

শত ভয়-শঙ্কার মধ্যেও আমাদের সাহস জুগিয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্য ও সমর্থন। আমরা বিশ্বাস করতাম, এই আন্দোলন শুধু চাকরির না, ন্যায় বিচারের লড়াই।

বাসস: কোন সময়টিতে জনসাধারণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শুরু করল? এবং এটার পরই কি আন্দোলনটি সরকারবিরোধী হয়ে উঠেছে?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: জনসাধারণ মূলত ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝির পর আন্দোলনে মনোযোগ দিতে শুরু করে, যখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অত্যাচারের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। যখন হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে, গণমাধ্যমে ছবি-ভিডিও ছড়ায়, আর আন্দোলন দমন করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে— তখন সাধারণ মানুষ বুঝে যায়, এটা একটা বড় অন্যায়ের প্রতিবাদ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিপ্রার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে থাকে।

তবে শুরুতে এই আন্দোলন সরকার বিরোধী ছিল না। এটি ছিল একটি নির্দলীয় দাবি ভিত্তিক আন্দোলন। কিন্তু যখন সরকারের পক্ষ থেকে দমনপীড়ন শুরু হয়, এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানো হয়— তখন কিছু অংশে সরকারবিরোধী ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে।

সুতরাং, জনসম্পৃক্ততার পরপরই আন্দোলন পুরোপুরি সরকারবিরোধী হয়ে ওঠেনি। তবে দমননীতি ও অবহেলার কারণে সরকারের প্রতি ক্ষোভ বাড়তে থাকে— এটাই আন্দোলনকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়।

বাসস: কোটা সংস্কার আন্দোলন যে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের রূপ নেবে, এটা কি আপনারা জানতেন?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: সত্যি বলতে, আমরা শুরুতে শুধুই কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার সংস্কার। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, সরকারের দমনপীড়ন, গুজব ছড়ানো, গ্রেপ্তার, হামলা, আর শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা আমাদের চোখে স্পষ্ট করে দেয়— লড়াইটা আর শুধু চাকরির জন্য নয়, এটা ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র আর মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার লড়াই। ফলে আন্দোলনটি ধীরে ধীরে স্বৈরাচারবিরোধী রূপ নেয়।

তাই প্রথমে না জানলেও, ঘটনার পরম্পরায় আমরা উপলব্ধি করি— কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল এক ধরনের জাতীয় জাগরণ, যা অনেকের মনের ভেতরে চেপে রাখা ক্ষোভকে প্রকাশের সুযোগ করে দেয়।

বাসস: যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখন আপনার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল? চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছেন কিনা? এই মৃত্যুতে আপনার মনে ভয় বা আতঙ্ক কাজ করেছিল কি?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: সেই সময়টা ছিল একেবারেই অন্ধকার। যখন প্রতিদিন খবর আসত— 'ওই এলাকায় গুলি চলেছে', 'অমুক গ্রেপ্তারের পর আর ফেরেনি', 'হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থী মারা গেছে'— তখন সত্যি বলতে আমাদের ভেতরে একটা আতঙ্ক, একটা অজানা শঙ্কা কাজ করত।

আমি নিজে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছি, রক্তাক্ত শরীর নিয়ে কেউ চিৎকার করছে, কেউ নিঃশব্দে পড়ে আছে— এ দৃশ্য কোনদিন ভুলতে পারবো না। মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছি, আর তখনই বুঝেছি— এই লড়াই শুধু দাবি আদায়ের না, এটা বাঁচা-মরার সংগ্রাম।

ভয় অবশ্যই কাজ করেছে। কিন্তু ভয় থেকেও বড় হয়ে উঠেছে দায়িত্ববোধ আর প্রতিরোধের সাহস। যখন দেখতাম আমার পাশের মানুষটা ভাঙা পা নিয়ে ব্যানার ধরে আছে, তখন ভয় চলে যেত, আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি পেতাম।

বাসস: জুলাই আন্দোলনে আপনার ওপর হামলা-নির্যাতনের বিষয়টা যদি একটু বলতেন?

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: সরকারি চাকরিতে কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে ১ জুলাই ২০২৪- এ ঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হয় কোটাবিরোধী টানা কর্মসূচি। ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করায় আন্দোলন আরো মাত্রা পায়।

১৭ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা ওয়াশিম শহীদ হওয়ার পর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে।

২২ জুলাই ২০২৪ পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যার দিকে শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটে পৌঁছাতেই চারদিক থেকে ঘিরে ধরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একদল পেটুয়াবাহিনী।

রিকশার পথরোধ করে নামিয়েই ‘ছাত্রদল করি’— নিশ্চিত হয়ে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে। মুহূর্তেই মোবাইল কেড়ে নিয়ে লক খুলে দিতে বলেই নির্যাতন শুরু করে। কেড়ে নেওয়া হয় মানিব্যাগসহ সঙ্গে থাকা নগদ টাকা।

কেউ ঘুষি মারছে, কেউ লাথি মারছে, কেউ আবার লাঠি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করছে। এক পর্যায়ে আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি। তখন টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় পরিত্যক্ত একটা বাড়ির নিচে। সেখানে নিয়ে চোখে কাপড় বেঁধে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের এক ভয়াবহ অমানবিক নির্যাতন। সেই নির্যাতনের স্মৃতি আজও মনে জেগে ওঠে, মনে পড়লে শিহরে ওঠে শরীর।

আঘাতের সময় চোখ বাঁধা থাকলেও ভেতরের চিৎকার থেমে থাকেনি। ডান পায়ের গুরুতর আঘাতজনিত কারণে এখনো হাঁটতে কষ্ট হয়। পিঠ, কাঁধ, হাতের আঘাতের চিহ্ন আজও রয়ে গেছে স্মৃতি হিসেবে। এখনো আঘাতের সেই স্মৃতি বহন করে আমার শরীর।

বাসস: সময় দেওয়ার  জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চট্রগ্রাম শারীরিক শিক্ষা কলেজে ৪০তম রাগবী রেফারীজ ও প্রশিক্ষক কোর্স সমাপ্ত
নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে : চসিক মেয়র
ঢাকায় সীসা নির্গমণকারী শিল্প-স্থাপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি
ডর্টমুন্ডে জুডকে অনুসরণ করার ব্যাপারে জোব বেলিংহাম 'উদ্বিগ্ন'
মানবতাবিরোধী অপরাধ : শেখ হাসিনার মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ১৭ আগস্ট
রশিদ খানকে অধিনায়ক করে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের প্রাথমিক দল ঘোষনা
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ ২৭ আগস্ট
সুন্দরবনে লোকালয়ে চলে আসা হরিণটি সুন্দরবনে অবমুক্ত
গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলব্যাগ বিতরণ
বিএনপির চাওয়া একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন : ড. মঈন খান
১০