শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই উঠে না। আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই।’
গত রাতে (সোমবার) অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব দলের পক্ষ থেকে এসব কথা বলেন।
চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব, এ ব্যাপারে উদ্যোগে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গতরাতের বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ছিল, এ বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবেই এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, এতো বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।’
খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং মোটামুটি একটা স্ট্যাবেলিটি এসেছে সরকার ব্যবস্থায়; সেক্ষেত্রে এ নির্বাচন (জাতীয় নির্বাচন) অনুষ্ঠানের জন্য আগামীকাল (বুধবার) সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্ট এসে যাবে। সুতরাং নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, নির্বাচন যত বিলম্ব হচ্ছে ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ এখন পুরো দেশ ও জাতির ফোকাসটা হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘সংকটটা ওই জায়গাতে, দেশে গত তিনটা জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। মানুষ সেজন্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ পাড়ি দিতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে স্থানীয় সরকার দেশ চালায় না। দেশ চালায় জাতীয় সংসদ। আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ। ফলে গণতন্ত্রের মূল বিষয়টা হচ্ছে জাতীয় সংসদ, এটা কার্যকর হলে গণতন্ত্র সচল হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের তৃণমূল স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। সেই ইউনিয়ন পরিষদই তো সরকার এখনো বাতিল করেনি। সেটা যদি বাতিল না করে সেখানে কীভাবে লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচন হবে?’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য কতগুলো আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো- ভোটার লিস্ট। নতুন করে ভোটার লিস্ট তৈরি করতে বেশি দিন লাগার কথা নয়। সরকার যদি চায়, তা এক মাসের মধ্যেই হালনাগাদ করতে পারে। এরপর প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ গুছিয়ে আনতে এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।’
সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরাই (বিএনপি) সংস্কার আগেই তৈরি করেছি। জাতির কাছেও আগে উপস্থাপন করেছি। সেই ২০১৬ সালে আমরা ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছি, ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি।’