শিরোনাম
শেরপুর, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার নারী উদ্যোক্তা জিনিয়া আক্তার (২১)। ২০২২ সালে টিউশনির জমানো ৩ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন আচারের ব্যবসা।
প্রথমে জেলার ৫ উপজেলায় আচার বিক্রি করেন । পরে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় আচার বিক্রি শুরু করেন।কিন্তু তার চলার পথটা সহজ ছিল না।
শেরপুরের শ্রীবরদি উপজেলার কুড়িকাহনীয়ার মৃত জাকির হোসেন (৪৫) ও তাসলিমা আক্তার (৪০) দম্পকির মেয়ে। জিনিয়া ২০২০ সালে শেরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ২০২২ সালে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন।
নারী উদ্যোক্তা জিনিয়া আক্তার বাসস'কে জানান, ২০২১ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের পুরো দায়িত্ব পরে তার উপর। সেসময় তিনি আয়ের জন্য টিউশনি শুরু করেন। পাশাপাশি ভাবতে থাকেন কিছু করে দ্রুত সফলতা অর্জনের। এরপর ২০২২ সালের জুলাই মাসে টিউশনির জমানো ৩হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন আচারের ব্যবসা। প্রথমে শেরপুরের ৫ উপজেলায় আচার বিক্রি হলেও গুনগত মান ভালো হওয়ায় জিনিয়ার আচার অনলাইনের মাধ্যেমে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে জিনিয়ার তৈরী আমের আচার কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০, বড়ইয়ের আচার ৫৫০ থেকে ৬০০, তেতুঁলের আচার ৬০০ থেকে ৬৫০, গরুর মাংসের আচার ১৫শ থেকে ১৬শ এবং শুটকির আচার বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
জিনিয়া বলেন, আচারের পাশাপাশি অনলাইন কাপড়ের ব্যবসাও রয়েছে তার। যেখানে প্রতিদিন তিনি আধুনিক ও নিত্যনতুন ডিজাইন এবং নানা রংয়ের কাপড় বিক্রি করে থাকেন। তার বিক্রি করা থ্রি পিস কাপড়ের মূল্যে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা, টু পিসের মূল্যে ৩০০ থেকে ১৫শ টাকা এবং শাড়ির মূল্যে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে তার নতুন একটি প্রতিষ্ঠান জেলায় খুবই সাড়া ফেলেছে যার নাম 'ভাতের হাঁড়ি'। এটি একটি ভ্রাম্যমাণ খাবার হোটেল। যেখান থেকে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টাকায় ভাত, বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা-ভাজি, মাছ, ডিম, ডাল ও মাংস পাওয়া যায়। তার 'ভাতের হাঁড়ি' ইতিমধ্যে সুনাম ছড়িয়েছে জেলার সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ।
জিনিয়া জানান, ব্যবসা থেকে লাভের অংশ ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তার বর্তমান মূল পুঁজি প্রায় ৩ লাখ টাকা।
আফিয়া আফরোজ সাইমা (২১) বলেন, জিনিয়া আমার খুব ভালে বন্ধু। তার ইচ্ছা শক্তি প্রবল। জিনিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পর, সে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরিবারের হাল ধরেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমরা আশা করি নিজ যোগ্যতায় জিনিয়া একদিন দেশসেরা নারী উদ্যোক্তার পরিচয় পাবে।
প্রতিবেশী ফারজানা আক্তার লিপি (২২) জানান, আমাদের দেশ এখন অনেক এগিয়ে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সফল। যার অন্যতম উদাহরণ জিনিয়া। মাত্র ৩ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করলেও তার পুঁজি দিনে দিনে বাড়ছে। সে স্বপ্ন দেখে তার প্রতিষ্ঠানে একসময় অনেক বেকার নারীর কর্মসংস্থান হবে।
জেলা বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক বিজয় দত্ত বাসস'কে জানান, জেলার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সময় আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। ৫ দিনব্যাপী এসব প্রশিক্ষণে নারী উদ্যোক্তাদের হাতে কলমে নানা বিষয়ে শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাদের সরকারিভাবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রাপ্তির আবেদনের ভিত্তিতে স্বল্প সুদে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।