বাসস
  ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৪

পাহাড়ে জলপাই চাষ করে সফল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার

পাহাড়ে জলপাই চাষ করে সফল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার হোসেন। ছবি : বাসস

মনসুর আহম্মেদ 

রাঙ্গামাটি, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫(বাসস) : পাহাড়ে জলপাই বাগান করে সফল হয়েছেন রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার হোসেন(৩৪)।

সরোয়ার হোসেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস)  জানান, গত ৩-৪ বছর আগে আমি আমার পরিত্যক্ত তিন একর জমিতে ১০৫ টি জলপাই গাছ লাগাই। আমার জলপাই বাগানে বর্তমানে জলপাইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম ফলনেই তিনি প্রায় ৪ লাখ টাকায় জলপাই বাগান বিক্রি করেছেন । কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার আশা করছেন, গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর ফলনের পরিমাণ আরো বাড়বে এবং অর্থের পরিমাণও বাড়বে। তিনি অন্যান্য ফসলের  সঙ্গে কৃষকদের জলপাই চাষে মনোযোগ দেওয়ার আহবান জানান। একটি গাছে কমপক্ষে দেড় থেকে ২ মণ জলপাই ধরে। বাজারে জলপাইয়ের দাম ভালো থাকায় এবার অনেকটাই লাভবান হবেন বলে জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা।

কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ারের মতো একই ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম রুবেল বাসসকে জানান, সরোয়ার ভাইকে দেখে আমিসহ আরো অনেকে উপজেলায় জলপাই বাগান করেছি।

আমি পাহাড়ের ২ একর ঢালু জমিতে ৫০টির মত জলপাই গাছের বাগান করেছি। বর্মানে আমার  বাগানে জলপাইয়ের  ফল এসেছে। প্রতিকেজি জলপাই বাগান থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, আমিও শখ করে বাড়ির পাশের জমির পাহাড়ি ঢালুতে ২০টি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এ গাছ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল দেয়। জলপাই গাছে এতো ফল আসে; যার পাতা থেকে ফল বেশি। এ ফলের অনেক চাহিদা। ফলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পাইকাররা বাড়িতে এসে জলপাই কিনে নিয়ে যান। এবছর তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার জলপাই বিক্রি করেছেন বলে জানান।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বর্তমানে গাছ থেকে জলপাই সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জলপাই সংগ্রহ করে এক জায়গায় একত্রিত করে বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। জেলার লংগদু উপজেলাতে জলপাইয়ের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বাসসকে জানান, জেলার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে জলপাই গাছ রয়েছে। এবছর রাঙ্গামাটিতে প্রায় ৬ হাজার ২শত মেট্রিক টন জলপাই ফল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, জলপাইর ক্রমবর্ধমান চাহিদা ভবিষ্যতে জেলার অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক গতি সঞ্চার করবে। বর্তমানে পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে  জলপাইসহ অন্যান্য ফসলের  উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই অতি পরিচিত মুখরোচক একটি ফল। কাঁচা ও পাকা যে কোন অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি ও তেল তৈরিতে এটি বেশী ব্যবহার হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় জলপাইয়ের বাম্পার ফলনে রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। জলপাই চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হওয়ার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এ জেলার জমি ও আবহাওয়া জলপাই চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই পাহাড়ে জলপাই চাষের বিস্তার করা গেলে এখানকার কৃষিতে জলপাইয়ের বাণিজ্য প্রসার করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।