শিরোনাম
নেত্রকোনা, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫(বাসস) : জেলায় কৃষকরা তিন দফা বন্যায় ফসলের ক্ষতির পর হাওরের একমাত্র ফসল বোরো চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
তিন দফায় বন্যার এ বছর রোপা-আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে।
অন্যদিকে এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল হাওরাঞ্চলের কৃষকরাও শঙ্কা নিয়েই দিনরাত এক করে মাঠে নেমেছেন বোরো আবাদে। এদিকে বোরো ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি হলেও অনেকের কৃষি ছাড়া অন্য কোন পেশা নেই। তবে ধানের দাম সারের দামের চেয়ে বেশি হলে অথবা সমান হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আশাও করছেন অনেকে।
কৃষি বিভাগ বলছেন, হাওরে শঙ্কার কারনে স্বল্প জীবনকালীন ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদেরকে।
হাওর অধ্যুষিত নেত্রকোনা জেলার মদনের কাইটাইল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব প্রান্তিক কৃষক স্বপন মিয়া।
গণেশের হাওরে তুলছেন বীজতলা। ইতোমধ্যে ১০ কাঠা জমিতে চারা রোপণ করলেও তার বাকী রয়েছে আরও ৪০ কাঠা।
একই হাওরে বাবুল মিয়া নামের অপর কৃষক ২৫ কাঠা জমিতে চারা রোপণ করেছেন এবার। এমনি করে হাজারো প্রান্তিক কৃষক তাদের স্বপ্ন বুনে যাচ্ছেন। কিন্তু সর্বশেষ রোপা আমন মৌসুমে দফায় দফায় তিনবার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসল ক্ষতি হয়েছে অনেকের।
যে কারণে পুনরায় ক্ষতির শঙ্কা থাকলেও একমাত্র পেশা কৃষি হওয়ায় আহার জোগাতে দিনরাত এক করে মাঠে নেমে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে বৈশাখ মাসে ধানের দর ভালো হলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আশাও করছেন কৃষকেরা।
কৃষক স্বপন মিয়া বলেন, এক বস্তা সারের দাম ১৪০০ টাকা। বাবুল মিয়া বলেন, এদিকে কাঠা প্রতি জমিতে চারা রোপনে কৃষকদের খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা।
তার উপরে সেচের জন্য লাগছে আবার ৫শ থেকে ৭শত টাকা।
হাওরের কৃষকেরা বলেন, এভাবে ধান চাষ করে দিনে দিনে খরচ বাড়লেও বাড়ে না ধানের দাম।
তারপরও খেয়ে পড়ে বাঁচার লড়াইয়ে থাকেন কৃষকরা।
অনেকে শঙ্কায় রয়েছেন গত আমন মৌসুমে উঁচু এলাকার ধান তলিয়ে গেছে, হাওর তো এমনিতেই নিচু। যে কারণে ভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর। তার মধ্যে হাওরাঞ্চলে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর।
গত রোপা আমন মৌসুমে আবাদ হয়েছিলো ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৫০ হেক্টর। তার মধ্যে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ২১ হাজার ৬২৭ হেক্টর।
এতে মোট ৭৫ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২৬ হাজার কৃষককে দেয়া হযেছে সরকারি প্রণোদনা।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলছেন, হাওরাঞ্চলে যেহেতু আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে তাই কৃষকদেরকে স্বল্প জীবনকালীন ধানের বীজ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
২০১৫ সনের হিসেব অনুযায়ী জেলার ১০ উপজেলায় মোট কৃষক রযেছেন ৪ লক্ষ ৮২ হাজার। তার মধ্যে হাওরাঞ্চলে রযেছে লক্ষাধিক।
তবে বড় ধরনের কোন দুর্যোগ না হলে এবার বোরো থেকে আগের ক্ষতি পুষিয়ে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি। এছাড়াও জেলায় বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতি পোষাতে ২৬ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।