সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর উদ্ভিদ

বাসস
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০১ আপডেট: : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৮
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। ফাইল ছবি

মোঃ আয়নাল হক \

খুলনা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ম্যানগ্রোভ ও অন্যান্য প্রজাতির উদ্ভিদকুল সমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য কিছু ক্ষতিকর উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
   
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন, জলাভূমির স্থানীয় ও অন্যান্য নানা উদ্ভিদ প্রজাতি উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এ স্থানটি ব-দ্বীপ, জোয়ারের সমতল, ম্যানগ্রোভ বন, উপহ্রদ, বালির ডোবা, মোহনা ও উপকূলীয় পরিবেশের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ।

সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, কিছু বিদেশী উদ্ভিদ ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে, যা গত কয়েক দশক ধরে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করছে ও বনাঞ্চল হ্রাস করছে।

তারা বলেন, সুন্দরবনের মতো সংরক্ষিত অঞ্চলে স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতি হুমকির মুখে রয়েছে কারণ স্থানীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণাগারে অসংখ্য আক্রমণাত্মক ও ক্ষতিকর বিদেশী উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, এই আক্রমণাত্মক উদ্ভিদগুলো স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতির বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে।

চিহ্নিত ২৩টি আক্রমণাত্মক প্রজাতির মধ্যে ১৯টি সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে স্থানীয় বা প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভুত হয়েছে। নদীর তীরে এই প্রজাতির প্রাচুর্য, বৈচিত্র্য ও আক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।

সুন্দরবনের উদ্ভিদে ২৬টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ প্রজাতি এবং ২৯টি ম্যানগ্রোভ-সম্পর্কিত প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গর্জন, কাঁকড়া, গোরান এবং বাইন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও কাঠ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকারক ১৭টি বিদেশী আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্ত করেছে।

তিনি বলেন, এই আক্রমণাত্মক উদ্ভিদগুলোর বিপণন ও বাণিজ্য রোধ করে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, যা পরিবেশ, অর্থনীতি ও সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিবেশ ব্যবস্থা থেকে এদের নির্মূল করা এবং এদের বিস্তার রোধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ, আমদানিকৃত উদ্ভিদ প্রজাতির স্ক্রিনিং এবং কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি বাস্তবায়নের মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশী উদ্ভিদের প্রবর্তন একটি পুরাতন প্রথা, এবং সকল বিদেশী উদ্ভিদ ক্ষতিকারক নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংরক্ষিত সুন্দরবন অঞ্চলে বিদেশী আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি সম্পূর্ণরূপে শনাক্ত করে দেশীয় উদ্ভিদ প্রজাতি ও বনাঞ্চল সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
 
প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ গবেষক পাভেল পার্থ বাসসকে বলেন, বিদেশী প্রজাতিগুলো সংরক্ষিত বনাঞ্চলে স্থানীয় প্রজাতির সাথে প্রতিযোগিতা করে, প্রতিবেশ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে এবং খাদ্য শৃঙ্খল ব্যাহত করে।

তিনি আক্রমণাত্মক উদ্ভিদের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং স্ক্রিনিং সহ উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জ্বালানির জন্য ফল সংগ্রহ করার কারণে সুন্দরবনের উদ্ভিদকুল হ্রাস পাচ্ছে, যা উদ্ভিদের প্রাকৃতিক পুনর্জন্মকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলস্বরূপ, ম্যানগ্রোভ বন দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন থেকে নদীর পানিতে প্রতিদিন হাজার হাজার বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির ফল শ্যামনগর এলাকায় ভেসে আসে।

তিনি বলেন,‘বীজ রোপণের পরিবর্তে, মানুষ এগুলোকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে, যা কেবল উদ্ভিদের প্রজাতি হ্রাস করে না বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
 
এটি উলে¬খযোগ্য যে সুন্দরবন এবং এর আশেপাশের এলাকায় ২৪৫টি প্রজাতির অ্যাঞ্জিওস্পার্ম এবং ফার্নের ৩৩৪টি উদ্ভিদ প্রজাতির আবাসস্থল।

সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা বন বিশেষজ্ঞ পীযূষ বাওয়ালি বলেন, বনায়নের জন্য ফলের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে স্থানীয় জনগণের সচেতনতার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই ফলগুলোকে বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হলে সুন্দরবনের এলাকা সম্প্রসারিত হতে পারত।’

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, সচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে সম্প্রতি জ্বালানি হিসেবে ফলের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক আদালত স্থাপনের পদক্ষেপ 
চেলসি ম্যানেজার মারসেকা এক ম্যাচ নিষিদ্ধ
টিপু মুনশি ও তার স্ত্রীর জমি জব্দ, ব্যাংক ও শেয়ার অবরুদ্ধ
সেপ্টেম্বরে নিজস্ব ভবনে যাচ্ছে ডিএমপি’র ১০টি থানা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সুপ্রিম কোর্ট হেল্প লাইনে রোববার পর্যন্ত ২০২৬ কল গ্রহণ করা হয়েছে
বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সহিষ্ণু অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৪২
বিপন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষায় বাগেরহাটে প্রদর্শনী
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুরের হাসপাতালের শেয়ার ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
এসএসসি পরীক্ষার চতুর্থ দিনে অনুপস্থিত ২৭ হাজার ৮১৯ জন
১০