বাসস
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৭
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৯

পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

অনলাইনে বক্তব্য দেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : ভিডিও থেকে

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র রুখতে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। 

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার টানা প্রায় দেড় দশক দেশের ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে জনগণ বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভয়ে কথা বলতে পারেনি। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দেশের মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনতে আমাদের নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। স্বৈরাচার পালালেও তার দোসররা রয়ে গেছে, এ জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তারেক রহমান আজ শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন ।

‘আগামী দিনে সংসদ কীভাবে পরিচালিত হবে, জাতীয় সংসদের মেয়াদ কত দিন হবে এবং এক ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন’ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ সব বিষয় আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে সক্ষম। এগুলো নিয়ে আমরা মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করলে রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব।’

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারের মূলে থাকা ব্যক্তি পালিয়ে গেলেও কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে তারা আবার দেশ দখলের চেষ্টা করছে। তাদেরকে এই লক্ষ্য হাসিল করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য যেকোনো মূল্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। তারা নানান দাবি-দাওয়ার নামে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।

এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থ্যক্য থাকতেই পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করা হবে। বড় দল হিসেবে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দায়িত্ব অনেক বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ।’

তারেক রহমান বলেন, অতীতের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, ‘এই মুহূর্তে একমাত্র বিএনপিই মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে গড়তে পারে। জনগণের জন্য বিএনপি কী করবে? রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফায় তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণ, কৃষি ও শিল্পখাতে উন্নয়ন ৩১ দফায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আমরা কৃষককে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে চাই। তবে, খেয়াল রাখতে হবে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য যেন জনগণের নাভিশ্বাসের কারণ না হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য তর্কে লিপ্ত থাকি, তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার। 

বিগত ১৫ বছর জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা অস্ত্রের বলে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কখনও আমরা দেখেছি ডামি নির্বাচন, কখনও দেখেছি ভোটারবিহীন নির্বাচন। সে কারণেই আমরা দেখেছি উন্নয়নের নাম করে লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছিলনা, দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন, বিচার ব্যবস্থা-প্রত্যেকটি ব্যবস্থাকে আবার পুনর্গঠন করতে হবে। রাষ্ট্রকাঠামোর এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যত দ্রুত শুরু করা যাবে, আমরা তত দ্রুত দেশ উন্নত করতে পারব। একমাত্র বিএনপিই দেশকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।’

তিনি বলেন, অচল কল কারখানাগুলোকে সচল করতে হবে। আমাদের অসংখ্য নদ নদী ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো খনন করতে হবে। আগামী দিনে সংসদের মেয়াদ কত দিন হবে, কত সদস্যের সংসদ হবে- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই বিতর্ক থাকতেই পারে। দিন শেষে আমরা এগুলো জনগণের উপর ছেড়ে দেব। এই নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিতর্ক রাষ্ট্র মেরামতের কাজ বিঘ্নিত হবে। তবে এর একমাত্র সহজ উপায় হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচন। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারই এর ফয়সালা করতে পারে। 

এর আগে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. বরকত উল্লাহ বুলু। 

উদ্বোধনী বক্তৃতায় বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কাউকে হত্যা করে এ দেশের ক্ষমতায় আসেননি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের সিপাহী জনতা শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এরপর তিনি এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। 

তিনি বলেন, আজ দেশের দেড় কোটি মানুষ মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি করেন। সেই বৈদেশিক শ্রম বাজার জিয়াউর রহমান চালু করেন। ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের পোশাক শিল্পও জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে পোশাক শিল্প আর বৈদেশিক রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে আজ চাঙ্গা করেছে। এসব অবদান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। সেই ইতিহাস আওয়ামী লীগ বদলে দিতে চেয়েছিল। 

জেলা বিএনপি‘র আহ্বায়ক এডভোকেট আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন দলের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক আহম্মেদ, বিএনপি কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন শ্যামল, বিএনপি কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সায়েদুল হক সাইদ, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, সালাউদ্দিন শিশির, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও জেলা বিএনপি নেতা মো. কবির আহম্মেদ প্রমুখ।

এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর জেলা বিএনপির এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলার সর্বত্রই ছিল উৎসবের আমেজ। শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন রং-বেরঙের ব্যানার ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে। দুপুর ১২টার আগেই দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।