শিরোনাম
ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু দলটি সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। কারণ সরকার গঠিত হয়েছিল ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন,‘একদিকে, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করছি। অন্যদিকে, আমরা একে অপরের পাশে বসে আলোচনা করছি। এটি গণতান্ত্রিক রীতি। কিন্তু আমরা সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না।’
রিজভী আরও বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা করার কারণে এখন আমাদের জেলে যেতে হবে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা জোরপূর্বক গুমের শিকার হতে হবে না। দমন-পীড়ন ও মিথ্যা মামলার মুখোমুখি হতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর এই পরিবর্তন এসেছে।’
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক জি এম রাজীব হোসেনের ‘দ্রোহের গ্রাফিতি: ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান’ বইটি অমর একুশে বইমেলা, ২০২৫ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাব (জেপিসি) সভাপতি হাসান হাফিজ, দৈনিক আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক ও লেখক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাংবাদিক রওনক হাসান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নুরুল করিম ভূঁইয়াও বক্তব্য দেন।
বাসস-এর উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক জুনান নিশাত অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন।
রুহুল কবির রিজভী দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার, জনগণের মুক্ত চিন্তাভাবনার অধিকার ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশে যদি গণতন্ত্র বিরাজ করে, তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এমনকি যদি সমাজে গণতন্ত্র বিরাজ করে, তবে দুর্ভিক্ষও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’
একটি সফল বিপ্লবের পর প্রতি-বিপ্লবের সুযোগ থাকতে পারে- উল্লেখ করে যাতে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ এই ফাঁকগুলো থেকে সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য তিনি সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
ভারতীয় গণমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের ‘ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মিত্রদের ভূমিকা সমর্থন করার’ জন্য রিজভী কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের এমন ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ এই নেতা দাবি করেন, ভারত শেখ হাসিনার পক্ষে একটি আখ্যান তৈরি করার ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে অপমান করার অপচেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত যা করছে, তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আক্রমণ। তারা সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিধি লঙ্ঘন করছে।’
হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হকের গাজীপুরে বাসভবনে শুক্রবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের একজন মাফিয়া মেয়র এখন হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি জানি না, তার কোন শিক্ষাগত পটভূমি আছে কিনা।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক কিংবদন্তি কবি ও লেখক হিটলার-মুসোলিনির স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে তাদের পক্ষে ছিলেন।
রিজভী আরও বলেন,‘একইভাবে, দেশের কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে সমর্থন করেছিলেন ও তার পক্ষে আখ্যান তৈরি করেছিলেন।’
তিনি বলেন, এর পটভূমিতে কিছু যুবক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলেছিলেন।
যে কোনো বিদ্রোহ-বিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা অপরিহার্য উল্লেখ করে- বিএনপি’র এই নেতা আরো বলেন, জুলাইয়ের বিদ্রোহে শিল্পকর্ম ও গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
তিনি বই, কবিতা, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে জুলাইয়ের বিদ্রোহের গ্রাফিতি ও প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।