বাসস
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:২১

কম খরচে বেশি লাভের আশায় রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা 

কম খরচে বেশি লাভের আশায় রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা । ছবি ; বাসস

সাব্বির আহমেদম

লালমনিরহাট, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : খেতের পর খেত জুড়ে সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে বাহারি রঙ্গের ফুলকপি। হলুদ ও গোলাপি  রঙের ফুলকপিতে খেতজুড়ে যেন রঙের আলপনা।  

বিদেশী জাতের এসব রঙিন ফুলকপি পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে চাষাবাদ হলেও কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ফুলকপির চাষ হচ্ছে। রঙিন ফুলকপি চাষে খরচ তেমন না হলেও দেশীয় সাধারণ জাতের ফুলকপির তুলনায় দাম অনেক বেশি। 

জেলার কৃষকরা প্রচলিত সাদা জাতের দেশীয় ফুলকপি চাষ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে এবার ঝুঁকেছেন রঙিন জাতের ফুলকপি চাষের দিকে। এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। 

এই ফুলকপি কাঁচা এবং রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় সালাদ হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। দেখতে রঙিন ও স্বাদের ভিন্নতা থাকায়  দেশীয় বাজারে অন্য ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির চাহিদা অনেক বেশি। 

দেশে এই জাতের ফুলকপির প্রচলন কম হলেও এবার শখের বসে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার উদ্যোক্তা সামাদ মিয়া। 

কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় রঙিন ফুলকপির চাষ করে এখন তার খেত জুড়ে সবুজ পাতার  ভেতর গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুলকপি শোভা পাচ্ছে। কপির এমন বিচিত্র শোভা সৌন্দর্য্য পিয়াসী যে কাউকেই  মুগ্ধ করবে। 

বাসসের সাথে আলাপকালে সামাদ মিয়া জানান, প্রচলিত সাদা জাত ও উন্নত রঙ্গিন জাতের ফুলকপির চাষাবাদের খরচ একই হলেও রঙিন ফুলকপিতে লাভ বেশি। দেশের বাজারে একেবারেই নতুন রঙিন কপি আসায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। 

সরেজমিনে দেখা যায়, দূর দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে আসছেন এ কপির ক্ষেত দেখতে।  জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, কৃষকরা উচ্চ মূল্যের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ফুলকপি চাষি সামাদ মিয়া জানান, রঙ্গিলা  হলুদ জাতের চারা জন্মানোর জন্য বীজতলা তৈরি করে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ২৫-৩০ দিনের মধ্য চারা লাগানোর উপযুক্ত হয়। এরপর বীজতলা থেকে চারাগুলো সংগ্রহ করে জমিতে আবাদের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সার, কীটনাশক ও সেচসহ সব ধরনের পরিচর্যা করতে হয়। গাছ বড় হওয়ার পর ছোট ছোট গুটি বাধতে শুরু করে। তারপর ৬৫-৭৫ দিনের মধ্য কপি বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।

তিনি আরো জানান, রঙিন ফুলকপি চাষে বিঘাপ্রতি খরচ ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা। বাজারে রঙ্গিন ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। বিঘা প্রতি রঙ্গিন ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

রঙিন উন্নত জাতের ফুলকপি চাষে কৃষক সামাদ মিয়ার সফলতায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন এই উন্নত জাতের রঙিন ফুলকপির চাষাবাদ বাড়ছে বলে জানা গেছে। প্রচলিত সাদা জাতের ফুলকপি ছেড়ে চাষিরা এখন রঙ্গিন ফুলকপি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। 

কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রংপুর বিভাগের  মধ্যে শুধুমাত্র কালিগঞ্জ উপজেলাও কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্ধেশ্বর এলাকায় কৃষক সামাদ মিয়ার জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় বিঘা  জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করা হচ্ছে। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি জানান, কালীগঞ্জের মাটি কৃষির জন্য উর্বর। এখানে সব ফসল চাষ করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রঙিন কপির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে। দাম ভাল পাচ্ছে। খরচ তুলনামূলক কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়। উপজেলায় বড় পরিসরে এ কপি চাষ করতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।