শিরোনাম
নওগাঁ, ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষ হচ্ছে। ইরি-বোরো মৌসুমের সময় প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় সময়মতো জমিতে রোপণ করতে পারতেন না কৃষক। এসেছে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার। ফলে সমলয় পদ্ধতিতে ইরি-বোরো রোপণ শুরু হওয়ায় খুশি কৃষকরা।
সরকারি প্রনোদনায় হচ্ছে এবার সমলয় পদ্ধতিতে ধানের আবাদ। জনপ্রিয় এই পদ্ধতির কারণে শ্রম, সময় ও খরচ কম লাগছে। আর এই যন্ত্রের ব্যবহার করে হেক্টর প্রতি ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারবেন কৃষকরা।
আধুনিক পদ্ধতিতে প্লাষ্টিকের ট্রেতে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। তৈরী হয়েছে বীজতলা। শিশির থেকে চারা রক্ষায় বীজতলায় দেওয়া হয়েছে পলি সেট। সেখান থেকে তুলে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে চলছে চারা রোপন। সমলয় নামে এই পদ্ধতিতে সরকারি কৃষি প্রনোদনার আওতায় জেলার মহাদেবপুর, ধামইরহাট ও পত্নীতলা উপজেলায় ১৫০ একর জমিতে শুরু হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। ধান কাটা ও মাড়াইও হবে মেশিনে।
চলতি অর্থ বছরে কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প থেকে জেলার এই তিন উপজেলায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। যেখানে জমি চাষ, সেচ ও রোপনে ব্যস্ত কৃষক। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপন করা হচ্ছে। এতে লাভবান হবেন কৃষক।
মহাদেবপুরের বাগাচারা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বাসস’কে বলেন, প্রকল্পে ১০ বিঘা জমি আছে। বিগত বছরগুলোতে তিনি পুরনো পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করতেন। এতে প্রতি বিঘাতে রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটামাড়াই করে ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ হতো ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। তবে প্রকল্প থেকে চাষাবাদ করায় এ বছর খরচ পড়ছে বিঘা প্রতি মাত্র ৫ হাজার টাকা। এতে এ মৌসুমে সাশ্রয় হবে অন্তত দেড় লাখ টাকা। চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হতে পারবের তিনি।
বাগাচারা গ্রামের আরেক কৃষক মতিউর রহমান বাসস’কে বলেন, এ প্রকল্প থেকে বীজ বা ধানের চারা, সার, জমি রোপণ করে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে জমি থেকে ধান কাটা-মাড়াই করে দেয়া হবে। তবে আমাদের শুধু জমি চাষ, সেচ ও কিটনাশক খরচ পড়ছে। এতে প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এতে আমাদের খরচ কম হচ্ছে। এছাড়া আধুনিক এ পদ্ধতিতে আমরা হাতে-কলমে চাষাবাদ শিখতে পারছি। আগামীতে নিজেরাই চাষাবাদ করব। আশপাশের কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখতে ও অভিজ্ঞতা নিতে আসছে।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের চালক আরশাদ আলী বাসস’কে বলেন, এক বিঘা জমি শ্রমিক দিয়ে রোপণ করতে প্রায় ৩ হাজার টাকা মজুরি নেয় এবং সারাদিন সময় লাগে। সেখানে মেশিন দিয়ে রোপণ করতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর মজুরি নেয়া হয় ৫০০ টাকা। দিনে প্রায় ১৪-১৫ বিঘা রোপণ করা যায়। এই পরিমান জমি রোপণে খরচ পড়ে প্রায় ২ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাসস’কে বলেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প থেকে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে তিন উপজেলায়। এতে ফসলের পোকা-মাকড়ের নানা বিড়ম্বনা দূর হবে এবং একই সময়ে আবাদের সময় যে কোন বিপদে একযোগে কাজ করে সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। পরবর্তীতে ধান কেটে কৃষকদের ঘরে তুলে দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের উদ্দেশ্যে হচ্ছে, ধান চাষাবাদে প্রতিটি প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া।
বীজতলা তৈরিতে চারাশোধন থেকে শুরু করে কীভাবে শৈত্যপ্রবাহের মাঝেও ভাল রাখা যায় এবং বীজতলার পরিচর্চা করাসহ ট্রেতে চারা উৎপাদন শেখানো হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে সময় ও শ্রম অপচয় রোধে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরনের ব্যবহারে যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে সমলয় চাষ। এতে ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা হয় এবং রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করায় সময়ও কম লাগে। সমলয় পদ্ধতিতে কৃষক একই জাত ব্যবহার করে একই সময়ে রোপণ ও কাটা-মাড়াই করতে পারবে।
চলতি মৌসুমে এ তিন উপজেলায় ১৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে এই মৌসুমে কৃষকদের সাশ্রয় হবে অন্তত ৫০ লাখ টাকা। চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।