চট্টগ্রাম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হয়েছে। এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় ২০শে ফেব্রুয়ারি বিকাল ২.৩০টায় জেলা শিল্পকলায় ও ৪.০০টায় শিশু একাডেমিতে শুদ্ধ বানান, সুন্দর হাতের লেখা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। দিবসের মূল কর্মসূচি শুরু হয় একুশের প্রথম প্রহরে রাত ০০.০১ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্য দিয়ে এবং সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে স্ব স্ব বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ, দপ্তর, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকে একুশের প্রভাতফেরি আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশ গ্রহণ করেন।
নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ, জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ একরামুল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বক্তৃতা করেন। সভায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে মাতৃভাষায় কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় ভাষা শিক্ষা ইনিস্টিটিউট তৈরি করা দরকার। এতে মানুষ শুদ্ধ বাংলা ভাষা শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ভাষাও আয়ত্ত্ব করতে পারবে। ফলে দেশের মানুষ যখন বিদেশে যাবে তখন তারা সেখানে বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের ভাষাকে সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদের ভাষাকে রেকর্ড করা হবে এবং তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও ভাষার ব্যাকরণকে স্থায়ীভাবে আর্কাইভ করা হবে। যদি কখনো এ ভাষা বলার মত কেউ না থাকে, এগুলো যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। ভাষা দেশের মানুষের মাঝে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশেও তাই হয়েছিল ১৯৫২ সালে। চীন, জাপান ও ফ্রান্সের মানুষরা তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পছন্দ করে।
এছাড়াও সুবিধাজনক সময়ে সংশ্লিষ্ট মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও প্রার্থনা করা হয়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও আউটার স্টেডিয়ামে ভাষা আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সংবাদ, আলোকচিত্র তথ্য ও ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্র্র্র্রীয় শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কসহ সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর মহানগর বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোাগী সংগঠন, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৫২ সালে ভাষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের আত্মত্যাগ করেছেন, ৭১ এ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া লাল সবুজের পতাকা, নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আর চব্বিশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যের বিকল্প নেই, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অনেক রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা সবাই মিলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে কাজ করবো।