সাব্বির আহমেদ
লালমনিরহাট, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল এখন সোনালি দানা খ্যাত ভুট্টা। চরাঞ্চল ও গ্রামীণ কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে এবং এই জেলার অর্থনীতিতে ভুট্টা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কয়েক বছর ধরে ভুট্টার গাছ ও পাতা বিক্রি করেও কৃষকরা বাড়তি আয় করছেন। পুষ্টিকর গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টা পাতার কদর বেড়েছে। বেড়েছে চাহিদাও। আর এই চাহিদার কারণেই ভুট্টা চাষিদের নিকটবর্তী এলাকায় বসছে পাতার হাট।
ভুট্টা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুট্টার পাতা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলে আনছেন লালমনিরহাটের ভুট্টা চাষিরা। ভুট্টা পাকার ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগে ভুট্টার কাঁচা সবুজ পাতা ভালো দামে বিক্রি হয়। এখন ভুট্টার পাশাপাশি ভুট্টার পাতাও বিক্রি করছেন জেলার ভুট্টা চাষিরাা। সোনালি দানা ভুট্টা ঘরে তোলার পর ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করেন কৃষকরা। ভুট্টার গাঠ, পাতা, খোসা সবই কাজে লাগে।
আমন ধান কাটার এখনো প্রায় এক থেকে দেড় মাস বাকি। এই সময়টাতে গোখাদ্যের সংকট দেখা দেয়। এসময় সবুজ ভুট্টার পাতায় খরের চাহিদা মেটাচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা।
সবুজ ভুট্টার পাতা গরু ও ছাগলের যেমন পছন্দের তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। খামারিরা গরু ও ছাগল মোটাতাজাকরণে দামি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ভুট্টার পাতা ব্যবহার করেন। বড় বড় খামারিরা ভুট্টার গাঠ, পাতা শুকিয়ে ও সাইলেজ তৈরি করে কয়েকমাস পর্যন্ত সংরক্ষণে রেখে গরু-ছাগলের খাদ্য চাহিদা পূরণ করছেন।
লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদী তীরের ৬৭ কিঃমিঃ জুড়ে জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে দামি সোনালি দানা ভুট্টা। জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে শুধু কালীগঞ্জ উপজেলায়ই এ বছর ৪১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। বিশাল এই ভুট্টা ক্ষেতের গাছ ও পাতাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দোকান বসে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন চর ও গ্রাম থেকে কৃষকরা ভুট্টার পাতা ভ্যানে ও ট্রলিতে করে নিয়ে এসে বিক্রি করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্সির বাজার এলাকার কৃষক মো. আব্দুল লতিফ বাসসকে বলেন, আগে ভুট্টার গাঠ ও পাতার দাম না থাকায় জমিতে পচিয়ে ফেলতাম। এখন প্রতি বিঘায় ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকার পাতা বিক্রি করি।
ভোটমারী ব্যাঙ্গেরহাট এলাকার কৃষক মো. রানা মিয়া বলেন, ‘বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করে ভুট্টা চাষের খরচ অনেকটাই উঠে আসে।’
বাজারে পাতা কিনতে আসা রফিকুল মিয়া জানান, দুটো গরুর জন্য ৫ টাকা মুঠো দরে ৩০ টাকার পাতা কিনেছেন। ভুট্টার মৌসুমে তিনি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকার পর্যন্ত পাতা কিনে গরুকে খাওয়ান। এতে তার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আগে বিভিন্ন কোম্পানির দানাদার খাদ্য না কিনে, যতদিন ভুট্টার পাতা থাকে ততদিন পাতা কিনে গরুকে খাওয়ান।
বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা কৃষকরা ভুট্টা সংগ্রহ করার আগে কাঁচা পাতা পাইকারি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই মৌসুমে কিছু মানুষ ক্ষেত থেকে পাতা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ভুট্টা কৃষকদের লাভজনক ফসল । এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।
তার মধ্যে ভুট্টা গাছের পাতা গরু ছাগল ও মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাতা এবং গাছ। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ভুট্টার পাতায় কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। দামি নেপিয়ার ঘাসের মত পুষ্টিগুণে ভরপুর ভুট্টার পাতা। খামারি ও কৃষকরা ভুট্টার পাতা গরু ছাগলকে খাওয়ানোর ফলে দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমছে । উৎপাদন খরচ কমায় কৃষক ও খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টার পাতা ও গাছ সাইলেজ করে রাখলে আপৎকালীন সময় খামারিরা তা ব্যবহার করে আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি জানান।