আগামী মাসে চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু

বাসস
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪৭
ছবি : বাসস

এস এম জাহিদ হোসেন

খুলনা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : রপ্তানি খরচ কমাতে ও সমুদ্রের অভ্যন্তরীণ রুটগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে আগামী মাসে চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে।

সরকারি সূত্র সম্প্রতি বাসস-কে একথা জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম-ভিত্তিক শিপিং এজেন্ট দ্য সি গ্লোরি দেশে প্রথমবারের মতো এই রুটের মধ্যে কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’র (এমপিএ) জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মকরুজ্জামান বলেন, ‘রপ্তানি-আমদানি সুবিধা বৃদ্ধি ও বৃহত্তর খুলনার অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, আগামী মাসের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। 

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি এই লক্ষ্যে একটি কন্টেইনার জাহাজের পরীক্ষামূলক পরিচালনা সম্পন্ন হয়েছে।

বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে মোংলা বন্দর বার্থ অ্যান্ড শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মোংলা বন্দরে কন্টেইনার আমদানি কম, যার ফলে খালি কন্টেইনারের ঘাটতি দেখা দেয়। চট্টগ্রাম থেকে খালি কন্টেইনার পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়, যার ফলে সামগ্রিক কন্টেইনার খরচ বেশি হয়। চট্টগ্রাম-মোংলা রুটের মধ্যে কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হলে, সময় ও রপ্তানি খরচ উভয়ই কমে যাবে।’

মোংলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, এটি একটি লাভজনক বন্দর হিসেবে রয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বন্দরটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গেছে। বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বৃদ্ধির ফলে এটির শ্রম কার্যকলাপ ও বন্দরের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, তবে নাব্যতা সমস্যা ও সীমিত ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার কারণে বন্দরটি তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারেনি। বর্তমানে, প্রতি মাসে একটিরও কম কন্টেইনার জাহাজ বন্দরে আসে। এই অঞ্চলে মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটসহ বিশাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

‘সি গ্লোরি’ এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য চট্টগ্রাম-মোংলা রুটের মধ্যে ছোট কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো- চট্টগ্রাম থেকে খালি কন্টেইনার পরিবহন এবং এরপর আন্তর্জাতিক রপ্তানির জন্য কার্গো ভর্তি কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসা।

‘সি গ্লোরি’র ম্যানেজার মাইনুল হোসেন বলেন, কোম্পানির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সাম্প্রতিক ট্রায়াল রানের ইতিবাচক ফলাফলের কথা জানিয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি চট্টগ্রাম থেকে মোংলায় খালি কন্টেইনার পরিবহন করতে পারি, যেমনটি বুড়িগঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি অভ্যন্তরীণ বন্দর ও কন্টেইনার টার্মিনাল পানগাঁওয়ের ক্ষেত্রে করা হয়, তাহলে প্রক্রিয়াটি সহজ হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার উন্নয়নও সম্ভব। সাম্প্রতিক এর ট্রায়াল রান সফল হয়েছে।’ 

মাইনুল বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম-মোংলা রুটের মধ্যে ১০০টি কন্টেইনারের পরীক্ষামূলক চালান পরিবহন করা হয়েছিল। এর সাফল্যের পর, কোম্পানি মে মাসে নিয়মিত ও আনুষ্ঠানিক কন্টেইনার পরিবহন শুরু করার পরিকল্পনা করছে। এই কন্টেইনারগুলো মংলায় মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটের মতো জিনিসপত্র দিয়ে ভরা হবে এবং এরপর চট্টগ্রামের মাধ্যমে এগুলো রপ্তানি করা হবে।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে মোংলা থেকে সরাসরি কন্টেইনার পরিবহনে খরচ কম হবে। তবে, যেহেতু এটি নিয়মিত পদ্ধতি নয়, সে ক্ষেত্রে খরচ ও সময় উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। 

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’র (এমপিএ) উপসচিব মো. মাকরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম রুট ব্যবহার করলে উভয় জাহাজের ভোগান্তি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (খুলনা)-এর চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নাব্যতার সীমাবদ্ধতার কারণে বড় জাহাজগুলো সহজেই মংলায় প্রবেশ করতে পারে না। তবে চট্টগ্রামের মাধ্যমে রপ্তানি সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে এবং কন্টেইনারের কোনও অভাব নেই। শিপিং এজেন্টদের চাহিদা অনুসারে চট্টগ্রামের মাধ্যমে পণ্য বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।’

বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দর বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল ও আশাব্যঞ্জক হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে, আশেপাশের অঞ্চলের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে।’

তিনি বলেন, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা এখন সন্তুষ্ট এবং আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সহজে পণ্য লোড ও আনলোড করার জন্য এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বন্দরে দেশী-বিদেশী উভয় জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে, কারণ এখানে কোনও জাহাজজট নেই।

তিনি বলেন, ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দর এলাকার উন্নয়ন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর, চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কার্যকর কন্টেইনার পরিবহন দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ সদস্য গ্রেফতার
সাতক্ষীরায় বিজিবি’র উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান
চাঁদপুরে বিএসটিআই-এর অনুমোদনহীন আইসক্রিম ও দধি প্রস্তুতের দায়ে জরিমানা
খুলনা জেলা ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার তাগিদ
গাজার উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ইসরাইলি বিমান হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছে
আওয়ামী লীগের বিচারসহ ৮ দফা ঐকমত্যে এনসিপি ও খেলাফত মজলিস
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ৫০ বছরের নয়, দুই হাজার বছরের পুরোনো : ঢাবি উপাচার্য
চীন-বাংলা বন্ধুত্ব নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে: ইয়াও ওয়েন
নারী বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সেরা একাদশে বাংলাদেশের নিগার ও শারমিন
দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর সুরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ
১০