।। জাহিদুল খান সৌরভ।।
শেরপুর, ২১ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : শেরপুরে প্রথমবারের মত সুপারফুড হিসেবে খ্যাত চিয়া সিড চাষ করে সাড়া ফেলেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে চিয়া সিড চাষ করে লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন তিনি।
কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রামের মৃত মোজাফফর আলী (৫০) এবং মোছা. ছানোয়ারা বেগম দম্পতির পুত্র শিমুল মিয়া (২৮)। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। শিমুল ২০১৩ সালে ইমামবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি ও ২০১৫ সালে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে ইংরেজিতে সম্মান শ্রেণিতে পড়ছেন। পাশাপাশি শখের বশেই বিভিন্ন ঔষধি গাছের চাষ করছেন।
বাসসের সাথে আলাপকালে শিমুল বলেন, মূলত কৃষির প্রতি ভালবাসা থেকে কৃষি নিয়ে কাজ করা শুরু। আমি চিয়া সিড ছাড়া বিভিন্ন ঔষধি গাছ এবং বস্তায় আদা চাষসহ বিভিন্ন নতুন সবজি নিয়ে কাজ করি।
তিনি জানান, জেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে এবং প্রথমবারের মত বিদেশি উচ্চ মূল্যের অর্থকরী ফসল চিয়া সিডের চাষ করেন। ৫০ শতক জমিতে বীজ বপন, সার, সেচ ও ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। এই সামান্য খরচ বাদে লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
শিমুল আরো জানান, অন্য যে কোনো ফসলের থেকে চিয়া সিড চাষে খরচ কম। রোগবালাইও কম হয়। পাশাপাশি বাজার মূল্য বেশি থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে চিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এক বিঘা জমিতে দুই থেকে ৩০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের বিভিন্ন সুপার শপ ও অনলাইনে প্রতি কেজি চিয়া সিডের বাজারমূল্য ৫শ থেকে ৬শ টাকা কেজি। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোকমা দানা ও তিল বীজের মতো। এটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি'সহ নানা পুষ্টিগুণ। যা মানবদেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া দেহের বাড়তি ওজন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন তার জমিতে চিয়া সিড দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
স্থানীয় কৃষক বেলায়েত মিয়া (৪২) বলেন, নতুন এই অর্থকরী ফসল চাষে শেরপুরে ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক চিয়া সিড চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কৃষক শিখন মিয়া (৩৫) বাসসকে বলেন, আমরা চাই শেরপুরে চিয়া সিডের আবাদ বাড়ুক। কারণ বিদেশ থেকে চিয়া সিডের আমদানি নির্ভরতা কমলে দেশের কৃষকরা লাভবান হবেন।
কামারিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খাদেম মিয়া বলেন, কৃষি আমাদের বাপ-দাদার আদি পেশা। বর্তমান অনেকেই কৃষি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। তবে আমরা গর্বিত যে, গ্রামের সন্তান শিমুল বিদেশি ফসল চিয়া সিড চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
শিমুলের প্রতিবেশী নূরে মদীনা মাদ্রাসার মোহতামিম মো. মশিউর রহমান বাসসকে বলেন, আমাদের দেশেও যে বিদেশি ফসল চাষ হয় সেটি অবিশ্বাস্য ছিল। তবে চিয়া সিড চাষ করে শিমুল তা প্রমাণ করে দিয়েছে। আমি আশা করি বিদেশি এই অর্থকরী ফসল চাষ করে শেরপুরের কৃষকরা উপকৃত হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বাসস'কে জানান, শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চিয়া সিড চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে নতুন কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যেন আগামীতে আরও বেশি কৃষক চিয়া সিড চাষে আগ্রহী হয়।