ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ গড়তে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশমালায় ‘সকলে নারীকে মানুষ হিসেবে চিনবে,জানবে ও সম্মান করবে’- এমন প্রত্যাশা করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে সুপারিশ তৈরিতে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে তা হলো-সংবিধান ও আইন, নীতি, প্রতিষ্ঠান, কর্মসূচি, সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাবিত মেয়াদ,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় এবং আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন।
আকাঙ্ক্ষা— তে কমিশন বলেছে, ‘সকলে নারীকে মানুষ হিসেবে চিনবে,জানবে ও সম্মান করবে’- সংস্কার কমিশনে প্রত্যাশা।
শনিবার সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি ও নারী পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণের সুপারিশ করেছে এ কমিশন।
এদিন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর কাছে নেতৃবৃন্দ তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিবেদন পেয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের যে-সব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সুপারিশমালায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে কি করণীয়-তা উল্লেখ করে বলেছে, ‘নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনসমূহ পর্যালোচনা করে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংশোধন করা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা; অভিযোগ প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে সকল আদালত ও থানায় নারী, শিশু, বয়স্কসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হেল্পডেক্স স্থাপন ও সক্রিয় করা; তদন্ত ও বিচার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, থানা, হাসপাতাল ও আদালত ইত্যাদিকে নারী বান্ধব করতে ইতোমধ্যে প্রণীত প্রজ্ঞাপনসমূহ বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করা।’
পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি জেলায় আক্রান্ত নারী সহায়তা কেন্দ্র (ভিকটিম সার্পোট সেন্টার), নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগী সহায়তা এবং সকল ভুক্তভোগীদের জন্য পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও প্রয়োজনীয় আশ্রয় নিশ্চিত করা।’
উল্লেখ্য, সংস্কার কমিশন ১৫ টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা : জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ণ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। গতবছরের নভেম্বরে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩ টি নিয়মিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের অধিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ৩৯ টি পরামর্শ সভা করেছে কমিশন। আর অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯ টি সভায় মিলিত হয়েছে।