দিনাজপুরে ব্রি-১০৩ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

বাসস
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ আপডেট: : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪
দিনাজপুরের উন্নত জাতের নতুন ভ্যারাইটি ‘ব্রি- ১০৩ ধান। ছবি: বাসস

দিনাজপুর, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জেলার  হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট ও বিরামপুর উপজেলায় আমন মৌসুমে উন্নত জাতের নতুন ভ্যারাইটি ‘ব্রি- ১০৩ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। 

দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি-১০৩ এ ধানের  জাতটি দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলা গুলোতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে দিনাজপুর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় এ ধান চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কৃষকদের  মধ্যে নতুন এ জাতের ধান চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ‘ব্রি ধান-১০৩’ জাতটির কৌলিক সারি বিআর (বিআইও) ৮৯৬১-এসি২৬-১৬। এ ধান প্রথমে ব্রি ধান-২৯ এর সঙ্গে এফএল-৩৭৮ এর সংকরায়ণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এফ জেনারেশনে অ্যান্থার কালচার পদ্ধতি (জীব প্রযুক্তি) ব্যবহার করে হোমোজাইগাস গাছ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচনের পর ৩ বছর ফলন পরীক্ষার করা হয়। পরে ওই কৌলিক সারিটি আমন গত ২০১৮ মৌসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এক পর্যায়ে কৌলিক সারিটির ফলন ব্রি ধান-৪৯ এর চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। যা পরে জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক আমন গত ২০২১ মৌসুমে ব্রি ধান-৮৭ (চেক জাত) এর সঙ্গে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষায় সন্তোষ জনক হওয়ায় আমন মৌসুমের জন্য একটি জাত হিসেবে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করা হয়। কৃষকেরা মাঠে চাষাবাদের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক গত ২০২২ সালে জাতটি ছাড় করণ করা হয়।ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, ব্রি ধান-১০৩ এর জীবন কাল ব্রি, ধান-৮৭ এর প্রায় সমসাময়িক। গাছের কাণ্ড শক্ত, ডিগ পাতা খাড়া, লম্বা ও চওড়া। ধানের ছড়া লম্বা ও ধান পাকার সময় ছড়া ডিগ পাতার উপরে থাকে। ধান লম্বা এবং চাল সোজা। চালের আকার আকৃতি লম্বা ও চিকন হওয়ায় কৃষক ধানের দাম বেশী পাবে। চাল রফতানি যোগ্য। জাতটির গড় জীবন কাল ১২৮ থেকে ১৩৩ দিন পযর্ন্ত ধানের চারা রোপণ থেকে ফসল উঠানো পযন্ত সয়ম প্রয়োজন হয়। এ জাতটির ফলন প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক ২ টন পযন্ত উৎপাদন হচ্ছে। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম বলে উদ্বোধনকারী কৃষি গবেষকরা মনে করছেন।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রোপা আমন মৌসুমে ব্রি ধান-১০৩ এর একটি প্রদর্শনী হিসেবে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বৈগ্রাম গ্রামের ৩ জন কৃষকের মধ্যে এ ধানের বীজ বিতরণ করা হয়। সেই সাথে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করতে ওই ৩ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয় ১০টি ড্রাম। এসব বীজ আগামী আমন মৌসুমে নিজে রোপণ করবে এবং অন্য কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য রাখছেন কৃষকেরা।

জেলার হাকিমপুর উপজেলার  বৈগ্রাম গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান (৩২) বলেন, কৃষি অফিস থেকে পাওয়া ‘ব্রি ধান-১০৩’ জাতের নতুন ধান ৪০ শতক জমিতে আবাদ করেছিলাম। এ ধানের জাত যেমন ভালো তেমনই বীজও ভালো ছিল। এ জাতের ধান আবাদে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক অনেক কম ছিল। এ কারণে তেমন কোনও কীটনাশক স্প্রে করতে হয় নাই। ধানের ফলনও ছিল বেশ ভালো।

তিনি বলেন, আবাদ করে পাওয়া ধান গুলো বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করেছি, আগামী আমন মৌসুমে এ উন্নত জাতের ধান জমিতে আবাদ করবো। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এ ধান আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্য কৃষকদের মধ্যে এ উন্নত জাতের ব্রি-১০৩ ধানের বীজ চাষ করার জন্য ছড়িয়ে দেবো। 

একই গ্রামের কৃষাণী রেহেনা আক্তার (৩০) বলেন, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে ব্রি, ধান-১০৩ নামে নতুন জাতের ধানের বীজ দিয়েছিল। সেই বীজ আবাদ করে ছিলাম। এ ধানে রোগ-বালাই কম। এছাড়া ঝড়ে ধান গাছ হেলে পড়ার হারও খুব কম। চিকন ধান হওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি ফলন হয় ২৫ মণ। অন্য ধানের তুলনায় এ ধান কিছুটা আগে পেকে যাওয়ায় দ্রুত কাটা যায়। এতে এ ধান আবাদের পর আলু ও সরিষাসহ রবিশস্য ওই জমিতে  আবাদ করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমে অন্য কৃষকদের মধ্যে ব্রি ধান-১০৩ এর বীজ ছড়িয়ে দিতে কৃষি অফিস থেকে বীজ দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক আমরা ধানের বীজ কৃষি অফিসের দেওয়া ড্রামে সংরক্ষণ করেছি। আগামী দিনে নিজে যেমন বেশি করে আবাদ করবো, তেমনই অন্য কৃষকদের  মধ্যে এ উন্নত জাতের ধান চাষের জন্য বীজ ছড়িয়ে দেবো।

অপর কৃষক শরিফুজ্জামান (৩৫) বলেন, ব্রি,ধান-১০৩ নামে নতুন একটি জাতের ধান বীজ স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে আমাদের দেওয়া হয়। আমরা ৩ জন কৃষক ৬ বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করেছি। আগামীতে এ ধানের আবাদ আরও বাড়বে বলে এ কৃষক আশা করছেন।

জেলার হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রোপা আমন মৌসুমে ব্রি-ধান ১০৩ এর একটি প্রদর্শনী দেওয়া ছিল। ধানের এ জাতটি রোপা আমন মৌসুমের জন্য খুব ভালো একটি জাত। ব্রি-ধান থেকে উদ্ভাবিত রোপা আমনের এ জাতটি রোগ-বালাই প্রতিরোধী। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আগাছা কম হয়। এ কারণে কৃষকদের ক্ষেত পরিচর্যা করাও সহজ হয়। মাঠ পর্যায়ে এর ফলাফল খুব ভালো পেয়েছি আমরা। বিঘা প্রতি এ জাতের ধানের ফলন হয়েছে প্রায় ২৫ মণ করে।

তিনি বলেন, আমরা যেহেতু রবি শস্যের আবাদ বিশেষ করে সরিষা ও আলুর আবাদ বাড়াতে চাইছি, তাই ব্রি ধান-১০৩ চাষ করলে সময় কম লাগায় আগে ভাগেই ধান কাটা যায়। এতে করে কৃষকরা খুব সহজেই সেই জমিতে রবি শস্য আবাদ করতে পারেন।

জেলার হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, যে কোন গবেষণা বা উদ্ভাবনী জাত মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ হতে সময় একটু বেশি লাগে। আমরা কৃষক পর্যায়ে কৃষকের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে সেই বীজ সংরক্ষণে আবারও কৃষকের  মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। জেলার হাকিমপুর উপজেলায় ব্রি ধান-১০৩ জাতের বীজ কৃষকরা সংরক্ষণ করেছেন। সংরক্ষিত বীজ কৃষকদের মাধ্যে বিতরণের মধ্য দিয়ে এ জাতের ধানের উৎপাদন ব্যাপক ভাবে সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
কিশোরগঞ্জের হাওরে চলছে ধান কাটার উৎসব
একশ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দাবি এনসিপি’র
আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে স্বাগত জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে 
বিরামপুরে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ
রাঙ্গামাটিতে রোপা বোরো ধান কাটার উদ্বোধন
উবারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর সাবস্ক্রিপশন কৌশলের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা 
কাতারে স্বাগত সংবর্ধনায় বাংলাদেশী চার নারী ক্রীড়াবিদের যোগদান
কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হচ্ছে,দরকার সরকারি সহযোগিতা
তৃতীয় দিনের খেলা শুরু দুপুর ১টায়
নাটোরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত
১০