টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ফসলি জমি, দিশেহারা কৃষক

বাসস
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১৭:১৯
ছবি : বাসস

বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ২২ মে ২০২৫ (বাসস): দেশের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও গত কয়েকদিন ধরে  অবিরাম বৃষ্টিতে জেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ধান, ভুট্টা, শাকসবজি, বাদাম ও কাউনসহ এ মৌসুমের প্রায়  সব ধরনের ফসলের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন জেলার শত শত কৃষক।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়নি। কেউ কেউ ধান কাটলেও বৃষ্টির কারণে তা মাড়াই করতে পারছেন না। আবার অনেকের ক্ষেত এখনও পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে।

সরেজমিনে এলাকার কৃষি জমি ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক জমিতেই ফসলের আর তেমন কোনো চিহ্ন নেই। চারদিকে শুধুই থইথই পানি। মনে হচ্ছে যেন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ছোট ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চিনি পাড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। চার মাসের পরিশ্রমের পর ধান পেকে গেলেও এখন সবই পানির নিচে। শ্রমিক সংকটের কারণে এখনও দুই বিঘার ধান ঘরে তুলতে পারেননি। 

তিনি বলেন,  ‘শ্রমিকরা জমিতে পানি দেখে ধান কাটতে রাজি হয় না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ কলাগাছের ভেলা বানিয়ে ধান কেটে নিচ্ছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে না তুলতে পারলে ধান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে।’

কৃষি শ্রমিক আকবর আলী বলেন,  টানা বৃষ্টির কারণে আশেপাশের এলাকা থেকে ফসলি জমিতে ময়লা পানি জমেছে। মূলত এই দূষিত পানির কারণেই আমরা পানিতে নেমে ধান কাটতে চাই না। পানিতে ময়লা, আবর্জনা, পোকামাকড় ভেসে বেড়াচ্ছে। এতে গায়ে চুলকানি, ঘা, এমনকি জ্বরও হচ্ছে। এর আগে অনেকেই পানিতে নেমে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া কৃষকরাও ঠিকমতো মজুরি দিতে চান না। তাই আমরা এই পরিস্থিতিতে পানিতে নেমে ধান কাটতে চাই না            ।

চরবাসুরিয়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলে বছরে একবারই ভালো ফসল হয়। এবার এক একর জমির সব ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শুধু ধানই নয়, ভুট্টা, শাকসবজি, বাদাম ও কাউনসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলও পানিতে ডুবে গেছে। তিনি হতবিহ্বল কণ্ঠে বলেন, কখন পানি নামবে, সেটাও জানি না!

শুধু ফসলই নয়, ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষেও। চিনি পাড়া গ্রামের কৃষক তৌহিদ আলী বলেন,  ‘টানা বৃষ্টিতে পুকুরের পাড় ভেঙে আমার সব মাছ ভেসে গেছে। আমার সব শেষ! ’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ধান পরিপক্ব অবস্থায় রয়েছে। পানিতে ডুবে গেলেই সব ধান নষ্ট হবে তা নয়। যদি দ্রুত পানি সরে যায়, তাহলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে যাবে। তবে কিছু এলাকায় অন্যান্য ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি ফসলি জমি থেকে সেচের মাধ্যমে কৃষিজমির পানি অপসারণ করে পানি দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অবস্থা আরো দুই তিন দিন অব্যাহত থাকলে ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ আর নেই
জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করলেন বেগম খালেদা জিয়া
‘নতুন কুঁড়ি’ ঢাকা পর্বে রাজশাহীর ১২০ প্রতিযোগী মনোনীত
শ্রমিকদের বেতন-মজুরি প্রদানের দায়িত্ব মালিকদের: শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা
আগামী নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে গোপনীয়তা অটুট থাকবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় আট বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত
গুমের সত্য উন্মোচনে প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করল গুম কমিশন
সরকার দেশের কর ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও ব্যবসা বান্ধব করতে কাজ করছে: এনবিআর চেয়ারম্যান
ফিলিস্তিনিদের অদম্য স্পৃহা একদিন তাঁদের মুক্তি এনে দেবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
সুরের মূর্ছনায় লালবাগ কেল্লায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন
১০