ঢাকা, ১৬ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ ও রাশিয়া দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, জ্বালানি ও বিজ্ঞান খাতে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সহযোগিতার ওপর নতুন করে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
রাশিয়া দিবস উপলক্ষ্যে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় রুশ দূতাবাস আয়োজিত এক সংবর্ধনায় এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি. মান্টিটস্কি, বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের দৃঢ়তার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে দুই দেশের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসেবে এই প্রকল্পকে উল্লেখ করেন তিনি।
মান্টিটস্কি আরো বলেন, ‘বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়া ও বাংলাদেশের দক্ষ প্রকৌশলী, নকশাবিদ ও প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। এ বছরের শেষ নাগাদ প্রথম ইউনিট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রধান অতিথি হিসেবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এসময়, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের কথার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি তুলে ধরেন এবং বিশেষভাবে জ্বালানি ও কৃষিক্ষেত্রে আরও গভীর সহযোগিতার আশা প্রকাশ করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশবিদেশের বিভিন্ন কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশে বসবাসরত রুশ সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ‘দ্যা ইমেজেস অব রাশিয়ান হিস্ট্রি’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যেখানে রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়। সেইসঙ্গে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নকারী সংস্থা রুশ রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন (রোসাটম) এর পৃষ্ঠপোষকতায় মস্কো ভিত্তিক রাশিয়ান সংগীত দলের একটি মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়।
২০২৫ সাল রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পের ৮০তম বার্ষিকী। রাষ্ট্রদূত মান্টিটস্কি একে ‘বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং দৃঢ় সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ হিসাবে বর্ণনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তির ঐতিহ্য এখনো রাশিয়ার অর্থনীতি ও এর আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে গড়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এশিয়া ও ইউরোপকে কেন্দ্র করে একটি নতুন নিরাপত্তা কাঠামো প্রস্তাব করেছেন। এটি হবে সমান অধিকারভিত্তিক ও অবিভাজ্য। যাতে সব দেশ নিশ্চিন্তে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, অন্য কোনো দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থের সাথে আপস না করেই।’
তিনি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সংগঠনগুলো যেমন সার্ক, বিমস্টেক ও আইওআরএ-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন, যেখানে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যার বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশে রাশিয়ার রপ্তানীকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম ও সার। রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রীয় গ্যাস কোম্পানি ‘গ্যাজপ্রম’ বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সক্রিয়, বিশেষ করে ভোলা দ্বীপে গ্যাসক্ষেত্র ও নতুন গ্যাস অনুসন্ধান পরিচালনা করছে।
সাহিত্য, ব্যালে নৃত্য, শিল্প ও সঙ্গীতে রাশিয়ার বিশ্বব্যাপী অবদানের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্য শেষ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রুশ সংস্কৃতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রুশ ব্যালে, সাহিত্য, শিল্প ও থিয়েটার মানব ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।’