নওগাঁয় জমে উঠেছে আমের হাট : সিন্ডিকেটে অসন্তোষ চাষীদের

বাসস
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৫:৩১
ছবি : বাসস

।। বাবুল আখতার রানা ।।

নওগাঁ, ১৬ জুন, ২০২৫ (বাসস) : আমের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁয় জমে উঠেছে আমের হাট। জেলার সাপাহার-নজিপুর আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে আমের হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে দিনব্যাপী চলে কেনাবেচা। 

সূর্য ওঠার আগে থেকে চাষিরা ভ্যান, ভটভটি এবং অটোরিকশায় ক্যারেট সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসেন বিভিন্ন প্রজাতির আম। যদিও ঈদের আগেই আমের বেচাকেনা শুরু হয়েছিল, তবে ঈদের পরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। গত কয়েকদিনের প্রচন্ড তাপদাহ ও গরমের কারণে আম পেকে যাওয়ায় প্রায় সব জাতের আম এক সাথে বাজারে এসেছে। ফলে কিছুটা কমে গেছে আমের দাম।

এদিকে প্রশাসন নির্ধারিত ওজন ও আমের গুনগত মান নিয়ে চাষী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা বিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। চাষীদের অভিযোগ , প্রশাসন কেজি হিসেবে আম ক্রয় করার নির্দেশ দিলেও ব্যবসায়ীরা সেটি মানছে না। সিন্ডিকেট করে তারা মণ হিসেবে ক্রয় করছেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় বাজারগুলোতে আমের চাহিদা তেমনটা না থাকায় আমের দাম কম। তাই লোকসানের শংকায় রয়েছেন তারা। বর্তমানে একসঙ্গে বাজারে এসেছে হিমসাগর, ল্যাংড়া, নাকফজলি, ব্যানানা ম্যাংগো ও আম্রপালি। তবে বিক্রি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। 

আজ সোমবার সকালে নওগাঁর সাপাহারের আমের হাটে প্রতি মণ হিমসাগর ১৪০০-১৬০০ টাকা, ল্যাংড়া ১২০০-১৫০০ টাকা, নাকফজলি ১৩০০-১৮০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৩৫০০-৪২০০টাকা, হাড়িভাঙ্গা ১৫০০-২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০-৩৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সাপাহারের ওড়নপুর গ্রামের আম চাষি আল মামুন বলেন, এ বছর আমের দাম খুবই কম। গত বছর এই বাগানের আম প্রতি মণ বিক্রি করেছি ৪২০০-৪৫০০ টাকা। আর আজ বিক্রি করলাম ২০০০-২৫০০ টাকা মণ। যে দামে আম বিক্রি করলাম তাতে উৎপাদন খরচও উঠবে না। অনেক টাকার লোকশান গুনতে হবে।

সাপাহার হাটে আম বিক্রি করতে আসা পত্নীতলার আম চাষি কোরবান আলী বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আম্রপালি আমের বাগান করেছেন। আজ বাজারে কিছু আম বিক্রি করেছেন। দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। এটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি।

সাপাহারের আম চাষী তছলিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করছে। তবে এটা ঠিক নয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরাদারী বাড়ানো দরকার। 

এদিকে চাঁপাইনবাগঞ্জের কানসাট থেকে আসা আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকদের সাথে আলোচনা করেই ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধার্য্য করেছি। এর কারণ হলো ক্যারেটের সকল আম এক সাইজের হয় না। ছোট বড় হয়।

ঢাকা থেকে আসা আম ব্যবসায়ী সিফাতুল্লাহ বলেন, আমের বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। আম কিনে ঢাকায় পাঠিয়েছি কিন্তু ক্রেতা নেই। ঈদের পর সবেমাত্র অফিস খুলেছে। ঢাকায় লোক সমাগম বেড়ে গেলে আমের দাম বাড়বে। 

সাপাহার উপজেলা আম আড়ৎদার সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, এ বছর তুলনামূলক ফলন কম হলেও আমের সাইজ বেশ ভালো। সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা এখনো মরদেহের অপেক্ষায় 
রাজনীতিকে ইতিবাচক ধারায় নিয়ে যেতে সকল দলকে ভূমিকা রাখতে হবে : গোলাম পরওয়ার
বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
ইসরাইল-ইরান সংঘাত বন্ধে পুতিন-এরদোয়ান ফোনালাপ
২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা হবে 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক আজ রাতে
জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জাতীয় পর্যায়ের খেলা শুরু
হাসপাতালে হামলা, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগ তেহরানের
চুয়াডাঙ্গা বিএনপি নেতা এমদাদুল হকের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক
১০