যারা গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার, তাদের পাশে দাঁড়াবে বিএনপি : মাহাদী আমিন

বাসস
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১৭:১৯
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মায়ের ডাক ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র ও ছওয়াব-এর পক্ষ থেকে নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয় । ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : যারা গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার, বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদি আমিন। 

আজ  সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে মায়ের ডাক ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র ও ছওয়াব-এর পক্ষ থেকে নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস পালনের জন্য একটি জাতীয় পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 
 
এ সময় মাহাদী আমিন বলেন, গুম পরিবার ও গত ২০ বছর যারা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়াবে। 

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিগত দিনে যেভাবে আপনাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল, আমরা সেভাবে হয়তো দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে, বিএনপি এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে। 

তিনি বলেন, আপনাদের ত্যাগের জন্যই আজকে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। ১৬ বছর আপনাদের ওপর যে নিপীড়ন-নির্যাতন চলেছে, তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আগামীতে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। কারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে, জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক হেফাজতের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিবর্গের পুনর্বাসন ও ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা এবং এই ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চয়ই করবো।

এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এবি পার্টির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই মায়ের ডাকসহ গুম পরিবারের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও তাদের ন্যায়সঙ্গত সকল সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করবো।

এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনার আমলে প্রায় ১০ হাজারের অধিক মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে। এখনও তাদের সন্তানরা ট্রমার মধ্যে রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে কখনও ভুলে গেলে চলবে না। 

মায়ের ডাকের সাধারণ সম্পাদক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গত ১২ বছর আমার পাশে যারা ছিলো তাদের প্রত্যেকেই কাউকে না কাউকে হারিয়েছে। কেউ পিতা হারিয়েছে, কেউ স্বামী হারিয়েছে, কেউ বা সন্তান হারিয়েছে। শত বাধা উপক্ষো করে ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েছিল। আর সেই প্লাটফর্মের নামেই হচ্ছে মায়ের ডাক। আমরা বিশ্বাস করি, ৫ই আগস্টের পর যখন আমাদের কোন স্বজনরা ফিরে আসেনি, তখন আমরা বেশি হতাশাগ্রস্থ হয়েছি। আমাদের এই সংগ্রাম অব্যহত থাকবে। 

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও ঘাপটি মেরে তাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে। তাদের এখনও আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে পারিনি। তাদেরকে আইনের আওতায় না আনা পার্যন্ত আমাদের বিশ্রাম নেই।

মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র’র মহাসচিব মাহবুল হক বলেন, জাতিসংঘ নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশন ১৯৮৪ এর ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের সংরক্ষণ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা পুনর্বাসনের অধিকার লাভ করে। জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল (OPCAT) অনুমোদন করতে হবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা নির্যাতন ও নিষ্ঠুর অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা কর্তৃক আটককেন্দ্রসমূহে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখে। একইসাথে, একটি জাতীয় প্রতিরোধ কাঠামো (NPM) গঠন করতে হবে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর নিয়মিত নজরদারি করবে।
ছওয়াব-এর সিইও এন্ড চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম আখি, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য দীপক রায়, এবি পার্টির আন্তর্জাতিক ও ছায়া সরকার বিষয়ক টিমের সদস্য হাজরা মেহজাবিন। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবাধিকার সংগঠক রেজাউর রহমান লেলিন।

এছাড়া, অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন, সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা, গুম ও খুনের শিকার ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টুর বোন মিতু আক্তার, গুমের শিকার এরশাদ আলী লাডলার পিতা মোহাম্মদ মাহবুব আলী, নিউ মার্কেট থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাপ্পি’র বোন ঝুমুর, গুমের শিকার পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি, ড্রাইভার কাওসারের মেয়ে লামিয়া আক্তার মিম, সাফা ও আরিয়ানসহ ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র গড়তে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা
আইসিসি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে ব্রিকস সম্মেলনে যাচ্ছেন না পুতিন
সংস্কার উদ্যোগের রূপরেখা নিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করল সরকার
সিলেটে খাদ্য প্রস্তুতকারী দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
বান্দরবানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সভা 
জাফলংয়ে অবৈধ ৭৭ ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিষিদ্ধ ‘পিরানহা’ মাছ জব্দ 
সিলেটে আরও দুইজনের করোনা শনাক্ত
নাটোরে কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনার সামগ্রী বিতরণ 
ইউজিসিতে দক্ষিণ এশীয় উচ্চশিক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্মেলন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত
১০