রাজশাহী, ৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): রাজশাহী মহানগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় ৪৭৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত হওয়া ২৯টি মামলায় এজাহার নামীয় ২২৪ জন ও সন্দেহভাজন ২৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীর ১২টি থানায় মোট ১ হাজার ৬২৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ৫ হাজার ৮২০ জন। এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ২৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামি রয়েছে ২ হাজার ১৭৩ জন ও অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে ৭ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে আটক হয়েছে ৪৭৮ জন। এজাহার নামীয় ২২৪ জন ও সন্দেহভাজন আসামি আটক হয়েছে ২৫৪ জন।
তিনি আরো জানান, ৫ আগস্ট আরএমপি থেকে ১৬৪টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪৭টি উদ্ধার হয়েছে। বাকি ১৭টি অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সহিংসতায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন থানা ভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও পুলিশের ব্যবহৃত ৫৬টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে পুরোপুরি পুড়ে যায় ২৭টি ও মেরামত করে ২৯টি গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজশাহী মহানগরীতে আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম নাম ২ জন শহীদ ও ১২০ জন আহত হন। হত্যা মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামি আটক বলতে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দুই হাতে গুলি চালানো যুবলীগের সন্ত্রাসী রুবেল আটক হয়েছে। বাকিদের এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ।
রাজশাহীর সাবেক ৩ জন এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ (রাজশাহী-৩), রাজশাহী-৪ আবুল কালাম আজাদ ও রাজশাহী-৪ আসনের(২০১৮ সাল) সাবেক এমপি ইঞ্জি. এনামুল হক। নওগাঁ থেকে আটক হয়েছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
শহীদ সাকিবের বাবা মাইনুল হক বাসসকে বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠিন শাস্তির দাবি করছি। যাতে আর কোনো মায়ের বুক খালি করার সাহস কেউ না হয়। যারা হত্যার সাথে জড়িত তাদের সবাইকে আটকের দাবি জানান তিনি।
শহীদ সাকিব আনজুমের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলেতো আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে, তাকে আর ফিরে পাবো না। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের যেন সঠিক বিচার হয়।
শহীদ আলী রায়হানের বাবা মো. মুসলেম উদ্দিন বলেন, আমরা সন্তান হারিয়ে যে কষ্টের মধ্যে আছি তা কাউকে বলে বোঝানোর মতো নয়। যারা আমাদেরকে সন্তানহারা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।
আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বাসসকে বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই অনেক আসামি আটক হয়েছে। যারা আটক হয়নি তাদের দ্রুত আটক করা হবে।