সাতক্ষীরা, ৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে, ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের। ভেঙে পড়ছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে ভ্যান ও রিকশা চালকসহ দিনমজুর মানুষেরা।
শহরের মানুষের উপস্থিতি তেমন না থাকায় আয় করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আলীনুর খান বাবুল জানান, পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, অপরিকল্পিতভাবে নদী-খাল খনন ও দখলের কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। টানা ৩-৪ দিনের ভারী বর্ষণে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামালনগর, বারুইপাড়া, কুখরালী, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুটিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার।
পুরাতন সাতক্ষীরা ডাঙিপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে তার উঠানে। সেখানে অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘরে ও উঠোনে পানি থই থই করছে। নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
শহরের কুখরালি এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান জানিয়েছেন, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কুখরালী উত্তরপাড়ার রাস্তাটি প্রায় এক মাস ধরে ১০০টি পরিবারের ৫০০ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিগত পাঁচ বছর ধরে চলছে এই অবস্থা।
তিনি আরো জানান, বছরের চার থেকে পাঁচ মাস ওই এলাকায় হাঁটু পানি জমে থাকে। দীর্ঘ দিন পানি আটকে থাকায় চলাচলের রাস্তাটি গেছে নষ্ট হয়ে গেছে। পচা পানির কারণে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে এলাকাটি। গোসল, পায়খানা ও খাবার পানি সংগ্রহে খুব কষ্ট হচ্ছে মানুষের। এ অবস্থায় শিশুরাও ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না পচাপানি ও সাপের ভয়ে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আগামী আরো দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে অবৈধ নেটপাটা ও বেড়িবাধ দিয়ে যারা মাছ চাষ করেছেন সেগুলো কেটে দিয়ে পানি অপসারণ করা হচ্ছে।
আজও ভারী বর্ষণের মধ্যে ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় পানি অপসারণের জন্য কাজ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।