গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা অবহেলিত

বাসস
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৪:০২ আপডেট: : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৪:৪৩
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের অধিকার সম্পর্কে ‘কেউ কেউ কথা রাখে’- শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও, যে সব ক্যাম্পাস সাংবাদিক তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সময়ের বর্বরতা ও সত্য প্রকাশ করেছিলেন, তারা এখনও অবহেলিত ও অশ্রুত। তারা পুরস্কৃত হননি।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘কেউ কেউ কথা রাখে’- শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভায় এই উদ্বেগগুলো প্রতিধ্বনিত হয়।

বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাসের সাংবাদিক, মিডিয়া পেশাদার, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের সদস্যরা একত্রিত হন। এরা ছাত্র সাংবাদিকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার অভাবের তীব্র সমালোচনা করেন।

যুগান্তরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা মোশাদ্দেকুর রহমান ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রাথমিক দিনগুলোতে নীরব মিডিয়া দৃশ্যপটের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘যখন জাতির বিবেক ঘুমিয়ে ছিল, তখন ক্যাম্পাসের সাংবাদিকরা লাঠিসোঁটা ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ মনে রাখেনি যে, আমরা কোথায় দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা পুরষ্কার চাইছি না- আমরা ন্যূনতম বেতন স্কেল, পেশাদার সুরক্ষা ও বিকাশের সুযোগ দাবি করছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডিইউজেএ)’র সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের পরিস্থিতি আরও বেশি অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। যদি আমাদের প্রতিবেদনগুলো কারো স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে আমাদের হয় হুমকি দেওয়া হয়, অথবা উপেক্ষা করা হয়। আমাদের বেতন কাঠামো নেই, স্বাস্থ্যসেবা নেই, প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা নেই। এমনকি আন্দোলনের পরেও, তথ্য মন্ত্রণালয় বা গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ কেউই আমাদের অধিকার সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি।

একই রকম হতাশার প্রতিধ্বনি করে ডিইউজেএ দপ্তর সম্পাদক তৌসিফুল ইসলাম ১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্যাতনের ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করে বলেন, আমাদের বন্ধুরা যখন রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল, তখন আমরা সেখানে ছিলাম। আমরা শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাবের ঘটনা ও ফুটেজ পাঠিয়েছিলাম। আমরা তখন ছিলাম ঘুমহীন ও ভীত। তবুও আজ আমাদের সেই সাহস আমাদের কোনও স্বীকৃতি দেয় না, বরং কেবল আরও শোষণ করে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, ডেইলি স্টার বাংলার সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মাহফুজ ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খোলা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে, তারা গণহত্যা চালানোর জন্য সবকিছু বন্ধ করে দেয়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা গ্রেফতার, আহত, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সব নথিভুক্ত করে। কিন্তু তারপরও তারা যে মিডিয়া হাউসগুলোতে কাজ করেন, সেখানে তাদের উপযুক্ত সম্মানীও দেওয়া হয় না।

এই বিষয়ে বৃহত্তর তাৎপর্যের ওপর জোর দিয়ে ইউল্যাবের অধ্যাপক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের একটি জীবন্ত আর্কাইভ তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপে তাদের অবদান অপরিসীম। তবুও, তাদের জন্য কোনও বৃত্তি, পুরষ্কার বা প্রশিক্ষণ উদ্যোগ নেই।

তিনি ছাত্র সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মিডিয়া হাউস ও অধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে জরুরি সহযোগিতার আহ্বান জানান।

যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার শিক্ষক রিদুয়ান হাসান অতীতের রাজনৈতিক চক্রে ভুল তথ্য প্রচারের ধরণটির দিকে ইঙ্গিত করেন। 

তিনি বলেন, ২০১৮ ও ২০২২ সালে মূলধারার মিডিয়াগুলো মিথ্যা বর্ণনা প্রচার করেছিল। ২০২৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের জন্য নিজেদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। তবুও, তাদের এখন ভুলে যাওয়া হচ্ছে।

এএফপি সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী মাজেদ আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, যখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছিল, তখন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবুও, এক বছর পরেও তাদের অধিকার উপেক্ষিত রয়েছে।

এ সময় ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস কাউন্সিলের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বেশ কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিককে সম্মানসূচক ক্রেস্ট প্রদান করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৩০ জন
বিএমইউতে জুলাই ওমেন্স উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
দুই দেশে বেনজীরের অস্থাবর সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় মানবিক ত্রুটির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান পাইলট সংগঠনগুলোর
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে: আমীর খসরু
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন শেখ মইনউদ্দিন
সাতক্ষীরার গর্ব বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো শক্তি দাঁড়ালে তাদের সাথে ঐক্য সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম
৬৪ জেলায় আজ থেকে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে : সংস্কৃতি উপদেষ্টা
জুলাই শহীদদের প্রকৃত সম্মান হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া: পরিবেশ উপদেষ্টা
১০