অসময়ে রুমার বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে আম

বাসস
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪৮
নীলফামারীর রুমা অধিকারী লেট ভ্যারাইটি আম উৎপাদন করে এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ছবি : বাসস

।। ভুবন রায় নিখিল।।

নীলফামারী, ১৯ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : লেট ভ্যারাইটি আম উৎপাদন করে নীলফামারীর রুমা অধিকারী এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। অসময়ে তার বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে হরেক জাতের পরিপক্ক আম।

জানা যায়, রুমা অধিকারী পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। ২০০৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলেন সে স্বপ্ন পূরণের দিকে। এক একর জমিতে গড়ে তোলেন লেট ভ্যারাইটির ভিন দেশি বিভিন্ন উন্নত জাতের আম বাগান।

রুমার বাগানে রয়েছে ভিনদেশি বিভিন্ন জাতের ৩০০টি আম গাছ। এর মধ্যে রয়েছে কিং অফ চাকাপাত, চ্যাংমাই, ডকমাই, কাটিমন, ব্যানানা, রেড পালমার, শ্রাবণী, হানি ডিউ, ফোর কেজিসহ আরও অনেক।  ইউটিউব দেখে এসব উন্নত জাত সম্পর্কে ধারণা নিয়ে চারা সংগ্রহ করেন তিনি।

রুমা অধিকারী জানান, এসব জাতের আম গাছে মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে পরিপক্ক হয়। লেট ভ্যারাইটির হওয়ায় এসব আম তুলনামূলক দেরিতে পাকে। দেশি আমের মৌসুম শেষ হওয়ার পর এসব জাতের আম বাজারজাত করা যায়। অসময়ে ফলন পাওয়ায় বাজার দরও ভালো পাওয়া যায়। ফলে লাভের পরিমাণও বেশি।

তিনি জানান, মাস্টার্স পাশের বছরেই নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের দুলাল অধিকারীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। স্বামী কর্মরত আছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক হিসেবে। রুমার বাবা রমনী মোহন রায় কর্মরত ছিলেন পুলিশে। বিয়ের পর স্বামীর চাকরির সুবাদে দীর্ঘ সময় কেটেছে রংপুরে। 

এরপর ২০২৩ সালে একাই (রুমা) গ্রামের বাড়িতে ফিরে স্বামীর পৈত্রিক এক একর জমিতে রোপণ করেন বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ আমের চারা। একই জমিতে আমের সঙ্গে রোপণ করেছেন বিখ্যাত দার্জিলিং কমলার চারা। বাগানের চারিদিক ঘিরে রয়েছে ড্রাগন ও সুপারির গাছ। এতে তার খরচ হয়েছে তিন লাখের বেশি টাকা। 

২০২৪ সালে প্রথম আমের ফলন পান। তাতে আয় হয় দেড় লক্ষাধিক টাকার ওপরে। এ বছর ৩০০ গাছে আমের ফলন পেয়েছেন। বাগানে পরিপক্ক পাকা আম জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে। তাতে চার লাখ টাকার ওপরে আয়ের আশা করছেন তিনি।

অর্গানিক ওই বাগানটি নাম দেন ‘বৃন্দাবন অর্গানিক এগ্রো ফার্ম’। সম্পূর্ণ অর্গানিক হওয়ায় প্রতিবছর দ্বিগুণ ফলন বাড়ার কথা জানান তিনি। বাগানে আমের সঙ্গে কমলা, ড্রাগন ও সুপারি নামলে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন ওই উদ্যোক্তা।

রুমা অধিকারী বলেন, বাগানে প্রতিদিন দুইজন শ্রমিক কাজ করেন। আমি নিজেও শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করি। পুরো দিন বাগানের বিভিন্ন পরিচর্যার কাজে দিন কেটে যায়।

এ স্বপ্ন পূরণে তাকে সহযোগিতা করছেন স্বামী দুলাল অধিকারী। তিনি ছুটিতে বাড়ি এলেই স্ত্রীর সঙ্গে লেগে পড়েন কাজে। এছাড়া দূর থেকে বাগান করার বিভিন্ন ধারণা দেন রুমাকে। সঙ্গে রয়েছেন দুই ছেলে রুদ্র অধিকারী ও অভি অধিকারী। বড় ছেলে রুদ্র এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে অভি অধিকারী এবার পাশ করেছে এসএসসি। তারাও লেখাপড়ার পাশাপাশি সহযোগিতা করছে মাকে।

রুমা অধিকারী বলেন, ইউটিউবে বিভিন্ন জাতের আম চাষের ধারণা নিই। বিভিন্ন জাতের আমের চারার খোঁজ খবর নিয়ে চারা সংগ্রহ করি। আমি চাই, দেশি আমের পাশাপাশি মানুষের কাছে ভিনদেশি আম পৌঁছাক, যেন আমরা বিশ্বমানের ফল চাষে পিছিয়ে না থাকি। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথায়  রুমা বলেন, এখন স্বপ্ন হলো বাগানটি আরও বড় করা। বাগানের পাশাপাশি পালন করেতে চাই উন্নত জাতের গরু। অর্গানিক চাষাবাদের জন্য স্থাপন করবো ভার্মি কম্পোস্ট সারের প্লান্ট যা ব্যবহারে রক্ষা হবে পরিবেশ, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশপাশি অনেক কৃষক এখানে এসে নতুন নতুন ধারণা পাবে। এজন্য আমার  প্রয়োজন সুদমুক্ত অথবা স্বল্প সুদে ঋণ যাতে দ্রুত পরিধি বাড়াতে পারি।

রুমার স্বামী দুলাল অধিকারী বলেন, ছুটি পেলেই গ্রামে এসে বাগানের চারা সংগ্রহ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আমি তাকে করেছি। ভবিষ্যতে জমির পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

একজন নারী হয়েও রুমার সাফল্যের কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। অনেকে ঘুরে দেখেছেন তার বাগন। তাদের মধ্যে গ্রামের শওকত ইসলাম (২৮) বলেন, মানুষের মুখে শুনেছিলাম এখানে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি আম গাছ আছে। তাই বাগান দেখছি, সুস্বাদু আম খেয়ে অনেক ভালো লেগেছে। তার এমন সফলতায় অনেকে উদ্যোগ নিচ্ছেন বাগান করার।

প্রতিবেশি উত্তম রায় বলেন, স্বপ্ন থাকলে সফল হওয়া যায়, রুমা বৌদি তার জ্বলন্ত উদারণ। তিনি যে পরিশ্রম করে আম বাগান সাজিয়েছেন, সেটি এলাকার অনেকের মধ্যে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, আম চাষে রুমা অধিকারীর সফলতা শুধু ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং এটি একটি উদাহরণ। যা দেখিয়ে দেয় পরিকল্পনা, শ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কৃষিতেও গড়ে তোলা সম্ভব টেকসই ভবিষ্যৎ। যদি এমনভাবে তরুণ-তরুণীরা কৃষি খাতে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দেশবরেণ্য আলেম প্রফেসর ড. এ. এইচ. এম ইয়াহইয়ার রহমানের ইন্তেকাল
মোংলা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় তিনজন নিহত
দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক শরীফুল কারাগারে
চলচ্চিত্রে গণমানুষের মুক্তির শৈল্পিক চিত্রায়ণ করেছেন ঋত্বিক ঘটক 
সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প ও সেবা খাতে অনিয়মে দুদকের অভিযান
নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পেশাদারিত্ব ও সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : কেএমপি কমিশনার
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিল প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিলো সরকার
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত
ধর্মীয় শিক্ষাকে বিএনপি সব সময় গুরুত্ব দেয় : ডা. জাহিদ
দিনাজপুরে নিরাপদ সড়ক বিষয়ে আলোচনা সভা
১০