খুলনায় নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষের পথে

বাসস
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১৮
ছবি: বাসস

খুলনা, ২২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : খুলনায় নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এটি হস্তান্তর করার চেষ্টা চলছে।

আগের কারাগারটি শতবর্ষী পুরোনো ও অতিরিক্ত জনাকীর্ণ। নতুন কারাগারটি একটি বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্প, যা আধুনিক অবকাঠামো ও ধারণক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে কারাবন্দি ও কারারক্ষীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারাগারটির ৯৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। 

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ (পিডব্লিউডি) জানিয়েছে, শেষ পর্যায়ের নির্মাণ কাজ ধারাবাহিক গতিতে চলছে। সম্প্রতি নির্মাণস্থল পরিদর্শনকালে খুলনা কারাগারের  জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান এবং জেলার মুহাম্মদ মুনীর হোসাইন ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান প্রকল্পের বিলম্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে কারাগারটি আমাদের বুঝে নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পিডব্লিউডি সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেনি। হস্তান্তর সম্পন্ন হলে এবং কর্মী নিয়োগ হলে আমরা বন্দিদের স্থানান্তর শুরু করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অক্টোবরের মধ্যে কারাগারটি হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছি।’

গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ২৫ মে হস্তান্তরের তারিখ নির্ধারিত ছিল। ঠিকাদারের সমস্যার কারণে সময়মতো নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আগস্ট শেষে বা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সব রকমের চেষ্টা করছি।’

২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৪৪ কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট এবং ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করে। 

এরপর একাধিকবার সময়সীমা বাড়ানো এবং দু’বার বাজেট সংশোধনের পর বর্তমানে প্রকল্পের খরচ ২৮৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে পুরোনো খুলনা কারাগারটি ১৯১২ সালে ভৈরব নদীর তীরে নির্মিত। কারাগারটি মূলত ৬৭৮ জন বন্দির ধারণক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হলেও বর্তমানে এখানে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি বন্দি রয়েছে। 

তাছাড়া, কারাগারের পুরোনো এই কাঠামোটি নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্যও অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে।

নতুন কারাগার কমপ্লেক্সটি খুলনা সিটি বাইপাস (রূপসা ব্রিজ রোড) বরাবর ৩০ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে। এটি ৪ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হলেও, বর্তমান অবকাঠামোতে ২ হাজার বন্দি থাকতে পারবে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও ভবন নির্মাণ করা হবে।

স্থানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, নতুন কমপ্লেক্সটি একটি আধুনিক আবাসিক এলাকার মতো দেখাচ্ছে, যেখানে টাইলসযুক্ত হাঁটার পথ, সাজানো বাগান ও নতুন রং করা ভবন রয়েছে। এখানে মোট ৫২টি ভবন নির্মিত হয়েছে।

নতুন কারাগারটিতে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আলাদা ইউনিট, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিশেষ ব্যারাক এবং নারী বন্দিদের জন্য হাসপাতাল, কাজের জায়গা ও একটি মোটিভেশন কেন্দ্রসহ আলাদা অংশ রয়েছে। 

এছাড়া, এখানে ৫০ শয্যার একটি সাধারণ হাসপাতাল, কারা কর্মীদের সন্তানদের জন্য একটি স্কুল, একটি গ্রন্থাগার, ডাইনিং হল, সেলুন ও লন্ড্রি সুবিধাও রয়েছে।

শিশুসহ নারী বন্দিদের জন্য একটি বিশেষ ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে, যেখানে শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। পুরুষ ও মহিলা উভয় বন্দির জন্যই আলাদা নামাজের ঘর, কাজের জায়গা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের স্থান রয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মূল কাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে চূড়ান্ত রং করা ও ভেতরের ফিনিশিং কাজ।

তিনি আরও জানান, প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে এবং কমপ্লেক্সে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সৌর বিদ্যুৎ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে।

জেল সুপার প্রধান জানান, নতুন কারাগারের জন্য ৬০০ কর্মী নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে। পুরোনো কারাগারে বর্তমানে প্রায় ২০০ কর্মী রয়েছেন। নতুন কারাগারটি চালু হলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রকল্পটি প্রায় শেষ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি (জিকেডিএসিসি)’র সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান কারাগারটি অতিরিক্ত জনাকীর্ণ এবং এতে মৌলিক সুবিধার অভাব রয়েছে। এই নতুন কমপ্লেক্সটি আমাদের বহু দিনের দাবি পূরণ করতে চলেছে। এই আধুনিক কারাগারটি নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি বন্দিদের মানবিক মর্যাদাও নিশ্চিত করবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে মানবতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান : মানবাধিকার কনভেনশনে বক্তারা
সিআইডির ছায়া তদন্তে ডাকাতির রহস্য উদঘাটন ও ডাকাত সর্দার গ্রেফতার
শহিদুল আলম বাংলাদেশের অবিচল মনোবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক : প্রধান উপদেষ্টা
নৌপরিবহন উপদেষ্টার সাথে আইএমও’র মহাসচিবের বৈঠক
ঢাবিতে অনুষ্ঠিত হলো  দুই দিনব্যাপী  জাতীয় বিতর্ক উৎসব
আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে পিরোজপুর জেলা বিএনপির মতবিনিময়
ডিএমপির বিশেষ অভিযানে ১৪ জন গ্রেফতার
কন্যাশিশু নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে উত্তরণে ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে গত চার দিনে ডিএমপির ৫,০৯৯টি মামলা
মহানবী (সা.)-এর সীরাতের প্রামাণ্য উপস্থাপন মানুষের অন্তরে প্রোথিত থাকবে : ধর্ম উপদেষ্টা
১০