লালমনিরহাটে পাটের চড়া দামে সুদিনের আশা কৃষকের 

বাসস
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৪১
পাটের চড়া দামে সুদিনের আশা কৃষকের । ছবি : বাসস

 বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ২৮ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): লালমনিরহাটে হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমের নতুন পাট। দীর্ঘদিন পর সোনালি আঁশের এমন ফলন ও দাম কৃষকের মুখে এনেছে অনাবিল হাসি। জেলা সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজারগুলোতে এ বছর পাটের কেনাবেচা ও সরবরাহ গত মৌসুমের তুলনায় অনেক ভালো।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বছর পাটের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় শ্যালো মেশিন বা বৃষ্টির পরিষ্কার পানিতে পাট জাগ দেওয়ার সুযোগ থাকায় আঁশের রঙ হয়েছে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়। ফলে বাজারে ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারছেন তারা। কৃষকদের আশা, এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে হারিয়ে যাওয়া পাটের ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসবে। একইসঙ্গে সুদিন ফিরবে তাদের জীবনে।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর লালমনিরহাটে ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো চাষের কারণে প্রতি বিঘায় গড়ে ৯ থেকে ১১ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে।

জানা গেছে, গতবছর এ সময়ে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। 

এবার মৌসুমের শুরুতেই প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।

জেলা সদরের পাট ব্যবসায়ী আক্কাস আলী বাসসকে বলেন, গতবছর মৌসুমের শুরুতে আমরা প্রতি মণ পাট কিনেছি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। মৌসুম শেষে দাম দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরুতেই আমাদের কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।

আরেক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মানিক জানান, প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ হাজার মণ পাট খুলনা-বাগেরহাটের কারখানায় সরবরাহ করেন। তার মতে, এ বছর কৃষকরা তুলনামূলক বেশি লাভবান হচ্ছেন। দাম স্থিতিশীল থাকলে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক, সেচ, জাগ দেওয়ার জন্য পানির খরচ, শ্যালো মেশিন ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমণে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে।

মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট আবাদ করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঠিকভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, ন্যায্য দাম আমরা পাই না। 

আদিতমারী উপজেলার কৃষক আব্দুর রহমান জানান, ফলন ভালো, দামও সন্তোষজনক। তবে কতদিন এ দাম থাকবে, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, প্রতি মণ পাট উৎপাদনে খরচ হয় দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা। প্রতি বিঘায় পাওয়া যায় ৮ থেকে ১০ মণ পাট। হিসাব করলে লাভ খুব বেশি হয় না। তবে এবার কিছুটা দাম বেড়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ও দাম দুই-ই ভালো। কৃষকরা গড়ে প্রতি মণে এক হাজার টাকা লাভ করছেন। তবে পূর্ণ সরবরাহ বাজারে এলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ায় বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বেড়েছে। ফলে এ বছর কৃষকরা লাভজনক অবস্থায় আছেন। বর্তমান বাজারদরে প্রতি মণে গড়ে এক হাজার ২০০ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। তবে এখনো হাটে পাটের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি, তিন-চার সপ্তাহ পরে প্রকৃত পরিস্থিতি স্পষ্ট হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
গত এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে আটক ৯১
লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন ড. খন্দকার মোশাররফ
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরলেন বেগম খালেদা জিয়া
ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত নতুন বাংলাদেশকে সঠিকভাবে পুনর্গঠন করতে হবে : গোলাম পরওয়ার
রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদকে নিয়ে এআই প্রযুক্তির বিভ্রান্তিকর ছবি, ডিএমপির প্রতিবাদ
সচিব হলেন মঈন উদ্দিন আহমেদ
উপসচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ২৬২ কর্মকর্তা
নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আগামী মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি
জাপানের স্বেচ্ছাসেবক নার্স পাচ্ছেন ‘ফরেন মিনিস্টারস কমেনডেশন’
হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে বেগম খালেদা জিয়ার
১০