বর্জ্যের শ্রেণিবিভাগ ছাড়া টেকসই ব্যবস্থাপনা অসম্ভব : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

বাসস
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সোমবার সিআইইউ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা করতে হলে প্রথমে তার শ্রেণিবিভাগ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। শ্রেণিবিভাগের পর ধাপে ধাপে বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা করা গেলে তা হবে দীর্ঘস্থায়ী ও পরিবেশের জন্য আদর্শ।

আজ সোমবার সকালে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ) মিলনায়তনে ‘পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান-২০২৫’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘পরিচ্ছন্ন রাখি-চট্টগ্রাম নগরী’ প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় এবং সিআইইউ ও ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের যৌথ আয়োজনে এই সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শ্রেণিবিভাগ ছাড়া টেকসই ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে পচনশীল এবং অ-পচনশীল এই দু’টি ভাগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে বর্জ্য ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা একটি অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে মিশ্র পদ্ধতির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে যে ব্যবস্থাপনা থেকে সার আসবে, বিদ্যুৎ আসবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনটি মূলনীতি— রিডিউস (কমানো), রিইউজ (পুনঃব্যবহার) ও রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার) নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির আবর্জনা সংগ্রহের জন্য দু’টি আলাদা রঙের পরিবেশবান্ধব পলিথিন বা পাত্র থাকতে পারে। আর যারা কালার ব্যাগ বা বিনগুলো ব্যবহার করবে না, তাদের হোল্ডিং ট্যাক্সের সাথে একটা জরিমানা করা যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘বিশ্ব পরিবেশ দূত’ আখ্যায়িত করে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, বর্জ্য ও আবর্জনা প্রশমন ইস্যুতে বাস্তবসম্মত সমাধান না পেলে শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য- যা তার বহুল আলোচিত ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের অন্যতম মূল উপাদান, তা সম্পূর্ণরূপে অর্জন করা সম্ভব নয়।

তবে, শ্রেণিবিভাগের পাশাপাশি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং জরিমানা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি আরো বলেন, এর পাশাপাশি সমাজের সকল অংশের অংশগ্রহণে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

সমাজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হলে সচেতনতার পাশাপাশি জরিমানা প্রবর্তন করা হলে পরিবেশ দূষণ কমে আসবে ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বর্জ্য খালে ফেলে দেয়, ছোট আকারে হলেও আমরা জরিমানা শুরু করলে নগর ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা মানসম্মত উন্নয়ন দেখতে পাবেন। মানুষ ইচ্ছে মতো যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলবে আর সিটি কর্পোরেশন সারাদিন পরিস্কার করবে— সেটা তো সম্ভব না।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সিটি কর্পোরেশনকেও নিজেদের আয় বাড়াতে হবে। সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স, ব্যবসা বিকাশসহ নানাভাবে আয় বাড়াতে পারে। সিটি কর্পোরেশন সরকারের ওপর যতবেশি নির্ভরশীল হয়ে যাবে, ততবেশি নগর সরকারের যে ফান্ড আছে সেটা পিছিয়ে যাবে। আমাদেরকে প্রমাণ করতে হবে সিটি কর্পোরেশন নিজের আয় দিয়ে নিজে চলতে পারে।

তিনি বলেন, আমি এই বছর চট্টগ্রামে গলা পর্যন্ত পানি দেখিনি। এই যে আমরা চট্টগ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে একটু রেহায় দিতে পেরেছি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজ, ছাত্র শিক্ষকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। সেইজন্য সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই।

চসিক মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরবাসীর সেবা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদনের জটিল প্রক্রিয়া চসিকের অগ্রাধিকারমূলক কাজ, বিশেষ করে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। পর্যাপ্ত অনুদান ছাড়া ৫৬টি খাল এবং ৬০০ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশন শহরকে পরিষ্কার ও জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পারবে না।

চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। নগর পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিআইইউ বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী খালেদ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, ইয়ংওয়ান কর্পোরেশন ও কোরিয়ান ইপিজেড-এর চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সুং, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৭৮
ঢাকার নদীগুলো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রক্ষার আহ্বান পানিসম্পদ উপদেষ্টার
শিক্ষার্থীদের গড়তে হবে দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ : চসিক মেয়র 
চট্টগ্রামে অনিয়মের দায়ে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
সেপ্টেম্বরের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৪.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে
নগরজীবনের মানোন্নয়নে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা ও স্থানীয় অংশীদারিত্ব জোরদার করবে এডিবি
সুকুক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান
মেজর জেনারেল মেসবাহউদ্দিন আহমেদ চা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান
আর্থিক চাহিদা পূরণে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা সভা
১০