দিনাজপুর, ২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় শারদীয় দুর্গাপূজার দশমীতে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ সিঁদুর খেলায় মেতেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দিনাজপুর শহরের সব দুর্গা পূজামন্ডপগুলোতে আনন্দঘন উৎসবমুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ একে অপরকে সিঁদুর দিতে দেখা গেছে।
দিনাজপুর জেলা পূজা উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার বলেন, মা দুর্গার বিদায়ের দিনে শহরের মণ্ডপগুলোতে সিঁদুর খেলা উৎসবে নারী-পুরুষ সকলেই মেতে উঠেছে। তিনি বলেন, ঘট বিসর্জনের পর দুর্গা দেবীর চরণে সিঁদুর ছোঁয়ান সনাতন ধর্মাবলম্বী বিবাহীত নারীরা। তারা নিজ হাতে আগামী দিনের মঙ্গল কামনায় স্বামীকে সিঁদুর দিয়ে ভক্তি ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। এটি স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘায়ু এবং দাম্পত্য জীবনের সুখ কামনার প্রতীক, যেখানে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। এসময় মিষ্টি আদান প্রদান করেন নারীরা।
আজ দুপুর ১২টায় পর দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন পুজা মণ্ডপে শুর হয় বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক গণেশকে দেয়া হবে বিসর্জন। দুর্গার বিদায়ে বিষাদের মাঝে আনন্দ কেবল সিঁদুর খেলায়।
শহরে কালিতলা দুর্গাপূজা মণ্ডপের ঠাকুর শ্রী জলধর ব্রহ্মচারী বলেন, সিঁদুর খেলার আরেকটি বড় দিক হল নারীদের মধ্যে মিলন ও বন্ধন। এ সময় বয়স বা সামাজিক অবস্থার পার্থক্য থাকে না। সবাই একই রঙ্গে রাঙ্গিয়ে ওঠেন, যা সমাজে সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
আজ দশমীর দিনে সিঁদুর খেলা বাঙালি সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। যদিও এর আচার মূলত বিবাহিতা নারীদের জন্য প্রথাগত, এখন অনেক জায়গায় অবিবাহিতা, এমনকি পুরুষেরাও আনন্দে যোগ দেন। ফলে এটি আর শুধু ধর্মীয় আচার নয়, হয়ে উঠেছে এক সামাজিক মহোৎসব সিঁদুর খেলা।
দশমীর দিন সকাল থেকে দেবী দুর্গার বিসর্জনের আগে বিবাহিতা নারীরা মায়ের চরণে সিঁদুর নিবেদন করেন। আসলে দেবী এখানে মাতৃ রূপে নয় কন্যা রূপে পূজিতা। তাই সিদুর যেন অক্ষয় হয়, সংসারজীবন সর্বদা সুখের হয়, সেই কামনাতেই দেবীর চরণে সিঁদুর অর্পণ করা হয়। এরপর সধবা মহিলারা একে অপরের কপালে, সিঁথিতে ও গালে সিঁদুর পরিয়ে দেন। হিন্দু সংস্কৃতিতে সিঁদুর সৌভাগ্য ও দাম্পত্য জীবনের প্রতীক। বিবাহিত নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরে থাকেন স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার কামনায়।
তিনি বলেন, দশমীর মূল সুর হল বিদায়। মা দুর্গা ৪'দিনের জন্য বাপের বাড়িতে আসেন, এরপর ফিরে যান কৈলাসে। এই বিদায়ের বেদনা কাটাতে নারীরা আনন্দ ও মিলনের মাধ্যমে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রার্থনা করেন মায়ের আশীর্বাদে পরিবার যেন অটুট থাকে, মিলন যেন চিরস্থায়ী হয়।