ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস বাড়াতে কাজ করছে সরকার।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে জাতীয় রুট টপ সোলার কর্মসূচি প্রণয়ন বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, সারা বিশ্বে সৌর বিদ্যুৎ তথা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। নেপালে এর পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ। ভারতে ৩০ থেকে ৪০ পারসেন্ট। কিন্তু আমাদের মাত্র ২ থেকে ৩ পার্সেন্ট।
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে পারলে আমাদের বিদ্যুতের ওপর থেকে চাপ কমে আসবে। এলএনজি আমদানি কম করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুদিন ফিরে আসবে।’
উপদেষ্টা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০শতাংশ ও ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পুরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে 'জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি' প্রণয়ন করা হয়েছে যা ২৯ জুন, ২০২৫ তারিখে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আওতায় সারা দেশে ২০০০-৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা এই কর্মসূচি দুইটি উদ্যোগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের অর্থায়নে এর নিজস্ব ভবনের ছাদে (ভাড়া করা স্থাপনা ব্যতীত) সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। তবে সরকার নিয়ন্ত্রিত যে সকল প্রতিষ্ঠান/কোম্পানির নিজস্ব আয় আছে, তারা নিজ উদ্যোগে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপন করবে এবং নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়গুলো থেকে প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে। এ সকল প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগ যাচাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করছে। বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, রুফটপ সোলার সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য একটি ওয়েব ভিত্তিক এপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শুধুমাত্র ছাদের ক্ষেত্রফল প্রদান করলেই, এটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা যায়। কোন পণ্যের কি ধরনের মূল্য তাও সেখানে উল্লেখ থাকে। এর ফলে খুব সহজেই প্রাক্কলন প্রস্তুত করা যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে পণ্যের যথাযথ মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। একজন গ্রাহক খুব সহজেই এই ওয়েব এপ্লিকেশন থেকে ধারণা করতে পারবেন, প্রতি মাসে তার কতটাকা বিদ্যুৎ বিল কমবে এবং কত বছরের মধ্যে তার বিনিয়োগ লাভজনক হবে। এই ওয়েব ভিত্তিক এপ্লিকেশন বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে সংযুক্ত রয়েছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মমতাজ বেগম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এলটিএম এর মাধ্যমে ক্রয়াদেশ প্রদানে উপযুক্ত ইপিসি ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নিম্নমানের মালামাল পরিহার করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কারিগরি স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ থেকে একজন করে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা রয়েছেন যারা এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ সমন্বয় করছেন।
প্রতি জেলার ১১ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে মোট ৭৭৯ জন কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে যেন তারা নিজ জেলায় এই কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন।
প্রশিক্ষিত এই সকল কর্মকর্তারা স্ব স্ব জেলায় গিয়ে নিজস্ব জনবল এবং ইলেকট্রিশিয়ানদের এ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন।
সারাদেশে সোলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানে সক্ষম কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহের তালিকা প্রণয়ন করে স্থানীয় বেকার নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
'জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি' বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কারিগরি ও সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া এর মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন সকল স্বাস্থ্য স্থাপনা এবং অন্য কোন আগ্রহী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদে সম্মিলিত (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে একক) দরপত্রের মাধ্যমে রুফটপ সোলার স্থাপন করা যাবে।
এ পদ্ধতিতে যে কোন প্রতিষ্ঠান নিজ ছাদের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উৎপাদিত ও ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সমন্বয় করে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা/কোম্পানি বিল প্রদান করবে। ফলে এ সকল প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে। চারটি মডেলের মাধ্যমে এই উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়ন করা যাবে, এ বিষয়ক বিস্তারিত, জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন গাইডলাইনে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ৬ টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা গত ১৫ অক্টোবর থেকে সারা দেশে পাঁচ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৪৬ হাজার ৮৫৪টি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে। ডিসেম্বরের আগেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে রুফটপ সোলার প্রকল্পে স্বল্প সুদে আর্থিক সহযোগিতা পাওযা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তারা এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন মডেলে অর্থায়ন করবে।