চট্টগ্রাম, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার (২০ অক্টোবর) দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন দুদক-এর চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন।
এ মামলায় বলা হয়েছে, রেজাউল করিম খোকন দুদক-এ দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১০ টাকার স্থাবর সম্পদ গোপন করেছেন।
এছাড়া তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৩ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজের ও পরিবারের নামে ভোগদখলে রেখেছেন।
২০১৯ সালে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুদক প্রমাণ পায়, রেজাউল করিম খোকনের বৈধ আয়ের বাইরে উল্লেখযোগ্য সম্পদ রয়েছে।
৩ এপ্রিল ২০১৯ সালে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ৬ মে ২০১৯ তারিখে তিনি চট্টগ্রাম-২ কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী জমা দেন।
এতে তিনি নিজের নামে ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮১ টাকার স্থাবর এবং ৫২ লাখ ৫০ হাজার ১৫৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দিয়েছেন।
যাচাই-বাছাইয়ে দুদক দেখেছে, প্রকৃতপক্ষে তার নামে ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৯১ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ তিনি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১০ টাকার সম্পদ লুকিয়েছেন।
দুদক-এর অনুসন্ধান অনুযায়ী, সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে খোকন ও তার পরিবার প্রায় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, জোরারগঞ্জ থেকে প্রাপ্ত দলিলপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সম্পদ তার বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
খোকনের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, তিনি ২০১০/১১ করবর্ষ থেকে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এই সময়ে তার বৈধ মোট আয় ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪১২ টাকা। কিন্তু তিনি স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ৮৪৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে বৈধ উৎসের বাইরে থাকা সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৩ টাকা। দায় হিসেবে তার ছিল মাত্র ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয় অনুসন্ধানের প্রতিবেদন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর কমিশনের নির্দেশক্রমে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
দুদক-এর পর্যবেক্ষণ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পদ বিবরণীতে আংশিক তথ্য গোপন করে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছেন। তদন্তে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তা পরবর্তী ধাপে আমলে নেওয়া হবে।
দুদক মামলাটি দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ সালের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায়।