//জাহিদুল ইসলাম জয়//
নরসিংদী, ২২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর চাপে অতিরিক্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসিংদী জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে নতুন ভবন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হলেও প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। যেখানে জায়গা আছে ১০০ জনের। সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ২০০ রোগী। অন্যদিকে বহি:র্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কারিমা, হানিফাসহ আরও অনেকে জানান, জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে তারা প্রথমে জরুরি বিভাগে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে ভর্তি করা হয়। কেউ পাঁচ দিন, কেউ তিন দিন ধরে চিকিৎসাধীন। তারা বলেন, ‘জায়গা স্বল্পতা থাকলেও চিকিৎসকরা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। নার্সরাও সময়মতো ওষুধ দিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে এত সেবা পাব ভাবিনি।’
রোগীর স্বজন মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। অনেকে সেবা পেতে স্বেচ্ছায় ফ্লোরে থাকছেন, কিন্তু ডাক্তার ও নার্সরা সাধ্যমতো সেবা দিচ্ছেন। একটু ভিড় হলেও আচরণে আন্তরিকতা আছে, এটিই সবচেয়ে বড় বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর স্বজনরা অযথা নার্সদের ওপর চড়াও হন, যা ঠিক নয়।’
আরেক রোগীর মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ও জামাই দুজনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন বুঝছি, এখানের চিকিৎসকরা মনোযোগী। তত্ত্বাবধায়ক নিজেও রোগীদের খোঁজ নিচ্ছেন, এতে আমাদের আস্থা বেড়েছে।’
রোগীর স্বজন আকলিমা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালটায় একটু ভিড় হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। আয়া ও নার্সরা অনেক পরিশ্রম করছেন। সবাই একটু সহযোগিতা করলে পরিবেশ আরও ভালো হবে।’ এই ব্যস্ততার মধ্যেও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান নিজেই মাঠে নেমে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। কখনো ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীর খোঁজ নিচ্ছেন, আবার কখনো চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সচল ও কার্যকর রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে গত শনিবার দুপুরে জেলা হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, পল্লি বিদ্যুতের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নরসিংদীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। এর মধ্যে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালেও বিদ্যুৎ ছিল না। তবে হাসপাতালের কিছু কক্ষে আইপিএস ও জেনারেটর সার্ভিসে আলো জ্বলছিল। তবুও শত শত রোগী নিচ তলায় ও দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে সেবা নিচ্ছিলেন।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ডা. মো. আবু জায়েদ, ডা. নাদিম আহমেদ, ডা. নাসিম আল হাসান প্রমুখ চিকিৎসক প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে রোগীদের নির্বিঘ্নে সেবা দিচ্ছেন। নিয়মিত অস্ত্রোপচারে ব্যস্ত ছিলেন সার্জারি বিভাগের ডাক্তার ডা. মো. হাছিবুর রহমান ভূঁইয়া ও ডা. মো. নাহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া নিয়মিত রোগী দেখেন হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. মাজহারুল আলম।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘২৫০ শয্যার নতুন ভবন খুব শিগগিরই চালু হবে। বর্তমানে লজিস্টিক ও জনবল সংকট থাকলেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, তবে আতঙ্কের কিছু নেই, সবাই সচেতন থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তবে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম বলেন, ‘নরসিংদী সদর এলাকায় দুটি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যা বর্তমানে জেলার মানুষের আস্থার স্থান হয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি জেলায় স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাইলফলক তৈরি করতে। ইতোমধ্যে সদর হাসপাতাল আধুনিকায়নের কাজ চলছে এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। যদিও জনবল ও লজিস্টিক সংকট রয়েছে, তবুও দ্রুতই ২৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা হবে।’
এদিকে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ‘কিউআই চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান। এ উপলক্ষে চলতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথকেয়ার ইমপ্রুভমেন্টের কারিগরি সহায়তায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের হাত থেকে তিনি বিশেষ সম্মাননা ও স্মারক গ্রহণ করেন।