
\ রেজাউল করিম মানিক \
রংপুর, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সময়ের সব কিছু মধুর হলেও অসময়ের সুন্দর জিনিসকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বিষয়টি যদি ফুল নিয়ে হয়, তাহলে আর কথাই নেই। কারণ, ফুল পছন্দ করেন না এমন মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
রংপুর অঞ্চলে অসময়ে গাছে গাছে ফুটেছে কনকচাঁপা, কদম আর কৃষ্ণচূড়া। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হচ্ছে। প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ রানা মাসুদ বলেন, উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে, কোনো কিছুই স্বাভাবিক থাকছে না। কার্তিকের মাঝামাঝি সময় হলেও দেখা নেই শীতের, কখনো প্রচণ্ড গরম কখনো হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রকৃতি যেন এই অঞ্চলে বিরূপ আচরণ করছে।
মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ সবকিছুই নির্দিষ্ট সময়ে নিজেকে প্রকাশ করে। কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায় অনেক সময়। উদ্ভিদ জগতেও বিভিন্ন সময়ে ব্যতিক্রম দেখা যায়। তেমনই রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অসময়ে মুগ্ধতা ছড়াতে দেখা গেছে বসন্ত এবং বর্ষা ঋতুর ফুল।
এসব প্রকৃতিপ্রেমীর জন্য আনন্দের খোরাক হলেও অনেকের মধ্যে ভাবের উদয় হয়েছে। তারা ভাবছেন, ঋতুচক্রের পথপরিক্রমায় প্রকৃতি কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছে।
এ ফুল দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে কবি ও লেখক রানা মাসুদ বলেছেন, ‘বসন্তের ফুল কনকচাঁপা এই হেমন্তে ফুটেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বর্ষার কদম ফুটে আছে শহরের জিলা স্কুলের সামনে ও মুন্সিপাড়া গোরস্থানের কয়েকটি গাছে।’
পথ চলতে সেনপাড়া ও ক্রিকেট গার্ডেনের পাশের দুটি গাছে অল্প কিছু সোনালু চোখে পড়েছিল। প্রকৃতির মধ্যে চাঞ্চল্য ঘটেছে নাকি অসময়ে সুসময় হয়ে এসেছে এসব?’
জানা গেছে, কনকচাঁপা একটি দুর্লভ ফুল। এটি সাধারণত বসন্তকালে ফুটে থাকে। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হেমন্তকালে এ ফুলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।
কদম ফুল সাধারণত বর্ষাকালে দেখা যায়। বর্তমানে হেমন্ত ঋতুর পথ চলা শুরু হয়েছে। এ সময় নগরীর বেশ কয়েকটি গাছে কদম ফুল দেখা গেছে। কৃষ্ণচূড়া ও সোনালু সাধারণত গ্রীষ্মকালের ফুল হলেও বর্তমানে নগরীর কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে।
কৃষিবিদ ও লেখক আবিদ করিম মুন্না বলেন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, সোনাপাতি, লতাপারুল, বকফুল ইত্যাদি। কিন্তু অসমের কনকচাঁপা, কদম, কৃষ্ণচূড়া দেখে মনে হচ্ছে সত্যি এটি প্রকৃতির বিচিত্র খেলা।
এমন বিরল ফুলের নিদর্শন পাওয়া গেছে রংপুরের বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়াতেও। রংপুরের বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপন বলেন, শনিবার দুপুরে কনকচাঁপার সন্ধান মিলেছে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। অসময়ে এমন ফুল দেখে অবাক হয়েছি। দীর্ঘ ৩৩ বছরের সাংবাদিকতায় এমন ফুল এ সময়ে চোখে পড়েনি।
ঋতুর পরিবর্তন ঘটেছে বললেন এই সাংবাদিক।