শীতের হাওয়ায় পিঠার আমেজ, জমজমাট লালমনিরহাট

বাসস
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৮
শীতের আমেজকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা ও হাট-বাজারে কর্মব্যস্ত ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতারা। ছবি: বাসস

\ বিপুল ইসলাম \

লালমনিরহাট, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শীত এলেই গ্রামগঞ্জ থেকে শহর—সবখানে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও শীতের শুরুতে ছড়িয়ে পড়েছে গরম পিঠার মিষ্টি ঘ্রাণ। শীতের আমেজকে কেন্দ্র করে শহরের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জনবহুল এলাকা ও হাট-বাজারে ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতাদের কর্মব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো।

কেউ স্থায়ীভাবে দোকান সাজিয়ে বসেছেন, আবার অনেকে ভ্যানগাড়িতে গ্যাসচুলা ও উপকরণ সাজিয়ে বেলা বাড়লেই দোকান খুলে বসেন। এসব দোকানে ১০ থেকে ৫০ টাকায় মানভেদে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। এসব মৌসুমী দোকানই বিক্রেতাদের জন্য হয়ে উঠেছে বাড়তি আয়ের বড় সুযোগ।

দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব পিঠার দোকানে রিকশাচালক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের ভিড় লেগে থাকে। বিক্রেতারা জানান, শীতে পিঠার বাড়তি চাহিদা তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা আনে।

বিভিন্ন দোকানে চিতই, পাটিসাপটা, ভাপা, তেলপিঠা, পুলি, ডিম পিঠা, নারিকেল পিঠাসহ নানা ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। সঙ্গে রয়েছে ডালপুরি, সিঙ্গারা, পেঁয়াজু, ডিম ও মাংসের চপসহ নানা নাস্তা। ধনিয়া বাটা, শুঁটকি বাটা, সর্ষে বা কালোজিরার ভর্তার সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়ার অভিজ্ঞতা শীতের সন্ধ্যাকে আরও উপভোগ্য করে তুলছে।

জেলা শহরের ভেতরে বিডিআর গেট সংলগ্ন এলাকা, সেনা মৈত্রী মার্কেটের সামনাসহ জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকায় এবং মিশন মোড়ের হামার বাড়ি বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সারিবদ্ধভাবে বসেছে পিঠার দোকান।

জেলা শহরের মিশন মোড়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পিঠা বিক্রি করছেন মো. কায়েস আলম (৫৫)। তিনি জানান, শীতের মৌসুমে ছয় কর্মচারী নিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পিঠা ও অন্যান্য খাবার বিক্রি হয়। 

বড়বাড়ি বাজারের পিঠা বিক্রেতা আনোয়ার মিয়া (৪০) জানান, একটি চিতই পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। পিঠার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা দেওয়া হলেও অতিরিক্ত কোনো মূল্য নেওয়া হয় না।

ক্রেতারাও শীতের পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় জমাচ্ছেন। জেলা শহরের মিশন মোড় এলাকার ক্রেতা লিটন ইসলাম বলেন, আগে গ্রামে পিঠা বানানো হতো, এখন শহরের ফুটপাতের দোকানেই সেই স্বাদ পাই।

একই এলাকার শিক্ষার্থী আফসানা মিমি (২১) বলেন, সহজে ও কম দামে পিঠা পাওয়ায় প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে এখানে আসি।

পিঠার খেতে আসা আরেক ক্রেতা আকাশ আহমেদ (৩২) বলেন, শৈশব থেকেই পিঠার প্রতি আলাদা আকর্ষণ। বিশেষ করে শীতকাল এলেই সেই আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ব্যস্ত ব্যবসায়িক জীবন সত্ত্বেও এখনো সুযোগ পেলেই প্রিয় ডিম-চিতই পিঠার স্বাদ নিতে দোকানে চলে আসি। আকাশ আলীর ভাষায়, দিনশেষে একটু পিঠা খেতে পারলেই মনে হয় শীতের আমেজটা পূর্ণ হয়।

এদিকে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে পিঠা বিক্রি করে ভালো লাভ হওয়ায় পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীদেরও শীতের পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায়। এই মৌসুমে পিঠা বিক্রির আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোর বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজারেও ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান বসতে শুরু করেছে। এসব স্থানে ক্রেতাদের ভিড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। গরম পিঠার মিষ্টি গন্ধে জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শীতের আমেজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
কুমিল্লায় হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন
‘আমরা শান্তি চাই' কিন্তু ইউক্রেনের 'আত্মসমর্পণ' নয়: ম্যাখোঁ
জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে মালদ্বীপের অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ নিয়ে আলোচনা
আইএমওর অধিবেশনে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সমর্থন চাইলেন নৌ উপদেষ্টা
টেকনাফে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ২৮ জন উদ্ধার
শেখ হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের মামলার রায় ১ ডিসেম্বর
বাগেরহাটে সুপারির ব্যাপক ফলন, ১০ বছরে সর্বোচ্চ সম্ভাবনা
ঠাকুরগাঁওয়ে পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষীদের প্রশিক্ষণ
নির্বাচনে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিতে লিগ্যাল নোটিশ
সংস্কৃতি উপদেষ্টার নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা শনাক্ত: ফ্যাক্টওয়াচ
১০