উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনে সব সংস্থার সহযোগিতা কামনা ইসির

বাসস
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৭
ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসির প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, সেনা বাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের প্রধান ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের স্পষ্ট বার্তা হলো- একটি নির্বাচনকে উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু রাখতে হবে। প্রত্যেক সংস্থা ও বাহিনীকে তাদের নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো শৈথিল্য বা ছাড় দেয়া হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কোনো আপোষ করব না। আচরণবিধি প্রতিপালনে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গুজব ও অপতথ্য রোধে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল এবং সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন করা হবে। মনিটরিং সেলে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধি থাকবেন। সেলের সাইজ বা প্রতিনিধির সংখ্যা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যে প্রতিনিধির নাম পাঠাবে, তা অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে।

সাইবার সিকিউরিটি সেলের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম মনিটর করা হবে, যাতে অপতথ্য ও গুজব দ্রুত শনাক্ত এবং প্রতিহত করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে ইউএনডিপি’র বিদ্যমান প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের পাশাপাশি ইসির নিজস্ব সক্ষমতা, তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং ফ্যাক্ট চেক করার অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা সমন্বয় করা হবে।

সচিব বলেন, ‘আমাদের কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি হবে দুইভাবে-টপ-ডাউন এবং বটম-আপ। তথ্য শুধুমাত্র উপরের স্তর থেকে নিচের স্তরে পাঠানো হবে না, মাঠ পর্যায়ের তথ্যও উপরের দিকে দ্রুত পৌঁছাবে। এতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সহজ ও দ্রুত হবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘প্রত্যেক সংস্থা তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবেন। কোনো নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে কেন্দ্র করে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে প্রত্যেক সংস্থা নিজেদের পদ্ধতি অনুযায়ী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’

তফসিল ঘোষণার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘তফসিল ঘোষণার খবর যখনই আমি পাবো, তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেব।’

রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আজকের এই সভা হচ্ছে মূল প্রস্তুতিমূলক সভা। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে আরও ছোট পরিসরে আলাদা বৈঠক হবে।’

ডেপ্লয়মেন্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন ধরনের ডেপ্লয়মেন্ট থাকবে। প্রথমটি স্ট্যাটিক, যা কেন্দ্রভিত্তিক। নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে কিছু নিরাপত্তা সদস্য স্থিরভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিভিন্ন স্থানে স্ট্যাটিক ও মোবাইল চেকপোস্ট থাকবে। দ্বিতীয়টি ভ্রাম্যমাণ বা মোবাইল, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। কেন্দ্রগুলোর ভৌগোলিক অবস্থা ও রাস্তাঘাট বিবেচনা করে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তৃতীয়টি সেন্ট্রাল রিজার্ভ। জরুরি পরিস্থিতিতে তা প্রয়োগ করা হবে।’

সচিব আরো জানান, এনটিএমসি’র তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করা হবে, যা দুর্গাপূজায় ব্যবহার হয়েছিল। এছাড়া কন্টিনজেন্সি প্ল্যান থাকবে, যাতে দুই-তিনটি স্থানে সমস্যা হলে ব্যাকআপ ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। সেনাবাহিনীর ‘ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার’ আগামী ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে।

আখতার আহমেদ বলেন, ‘সব সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা নিশ্চিত করতে সব প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু করার জন্য সব বাহিনী ও সংস্থা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সিরামিক শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের প্রতি বাণিজ্য উপদেষ্টার আহ্বান 
আলোকচিত্রী আমির হামজাকে অভিনন্দন জানালেন ফারুকী
গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ আয়োজনে এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলন শুরু
ঢাবির ১৫ গবেষণা কেন্দ্রে পরিচালক নিয়োগে প্রতিবেদন উপস্থাপন
রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ২১ 
খুলনা বিএনপির ১০ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ১ জনের স্থগিত
খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দিনাজপুরে বিশেষ দোয়া
নারায়ণগঞ্জে সাবেক ওসি মোরশেদ আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা
বাংলাদেশকে ১৮২ রানের লক্ষ্য দিল আয়ারল্যান্ড
১০