বাসস
  ১৫ মে ২০২৩, ১১:২৮

মুহিত ছিলেন সংকীর্ণতার উর্ধ্বে একজন বিশ্বনাগরিক : স্মরণসভা বক্তারা

সিলেট, ১৫ মে, ২০২৩ (বাসস) : ভাষা সংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় বক্তারা বলেছেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর মেধা, মনন এবং সৃজনশীল কর্মের জন্য তিনি ছিলেন পৃথিবীর আলোকিত মানুষ। তিনি সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতেন। তিনি ছিলেন সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে একজন বিশ্ব নাগরিক।’
গতকাল রবিবার বিকেলে সিলেটের দরগাহ গেটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী।
সংগঠনের সদস্য সচিব আহমেদ নূরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা পর্বে ‘বহুমাত্রিক আবুল মাল আবদুল মুহিত’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লেখক, অনুবাদক ও টেগোর সেন্টারের প্রধান নির্বাহী মিহির কান্তি চৌধুরী। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন শিক্ষাবিদ ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ।
অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন এক কর্মঠ দেশপ্রেমিক। ছিলেন সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে একজন বিশ্ব নাগরিক। তাঁর মৃত্যুর আগে গুণী শ্রেষ্ঠ হিসেবে গণ সংবর্ধনা দিতে পেরে সিলেটবাসী ধন্য। কিন্তু আমরা রাজনীতিবিদরা কি তাঁকে যথাযথ সম্মান দিতে পেরেছি? পারিনি। আমরা তাঁর আদর্শ লালন করে তাঁকে সম্মান জানাতে পারি।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতেন। তাঁর প্রতি আস্থা ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি প্রচলিত রাজনীতিবিদ না হয়েও কীভাবে মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করতে হয়, তা জানতেন। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতেন।’
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আরও বলেন, ‘তিনি  লেখালেখি, গবেষণা ও পরিবেশ আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকলে আমরা তাঁর সংস্পর্শ পেতাম না। অনেক কিছু শিখতে পারতাম না।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আব্দুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বরুণ রায়, পীর হাবিবুর রহমান,; আমরা যদি এসব গুণীদের চর্চা করি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আমি চিনি একজন গবেষক হিসেবে। তাঁর হাতে সবসময়েই বই থাকতো এবং তাঁর অনুপ্রেরণায় আমিও লেখালেখি করি।’
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা। মনে প্রাণে বাঙালি ছিলেন। মানুষের পাশে ছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাঁর পরিকল্পনার ধারাবাহিক ফল পাচ্ছি আমরা। সৎ এবং কর্মঠ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর অবদান ছিল অনন্য। তাঁর বিকল্প কেউ হবে না।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন।
মূল প্রবন্ধে মিহির কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের হাতেগোনা ব্যক্তিদের একজন যিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন অনায়াসে। তিনি যে নির্ভীক ছিলেন তা অনেকের জন্য ভয়ের কারণ ছিল। তাঁর মেধা, মনন ও ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ সঠিক সময়ে হয়েছে বলেই তাঁর এই দুর্দান্ত প্রকাশ সম্ভবপর হয়েছিল। আবুল মাল আবদুল মুহিতের বর্ণাঢ্য জীবনের দর্শন নতুন প্রজন্মকে বিকাশমুখী করে তুলবে। উগ্র প্রকাশ ভাবনা সৃজনশীল বিকাশ ভাবনার কাছে পরাভূত হবে।’
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় শিক্ষাবিদ ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, ‘তাঁর (মুহিত) রাগের মধ্যে সংস্কৃতি ছিল, তাঁর কলহাস্যে ছিল সংস্কৃতি। তাঁর সারল্য এবং মেধাপ্রজ্ঞা ছিল প্রবাদপ্রতিম। তাঁর রচনা পঠনপাঠনের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করব।’
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার আরশ আলী বলেন, ‘ব্যক্তি আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি প্রতিষ্ঠানে নিজেকে রূপান্তর করেন। পারিবারিক শিক্ষা পরিবেশ তাঁর সুখ্যাতির পেছনে কাজ করেছে। তিনি দেশপ্রেমিক এবং আজীবন মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন।’